আবেগের গুরুত্ব প্রকাশ করে আপনার ঘরের রং

জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত রঙিন নয়তো সাদা কালোয় মোড়া। প্রেম, ভালোবাসা, রাগ, অভিমান,ক্ষোভ সবেতেই কিছু না কিছু রং এর ছাপ লেগে আছে। পৃথিবীর যে কোনো সৃষ্টিই রং ছাড়া অচল। শান্ত পরিবেশ, শীতলতা -এগুলো আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খুবই কাম্য। ঋতুবৈচিত্র্যে ভরা দেশে, ঐতিহ্যও কম নয়। তবে সব ঋতুর চেয়ে গ্রীষ্ম-ই এখানে বেশি বিরাজ করে, স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি মানুষ ঠাণ্ডা রং একটু বেশি পছন্দ করে।
ভিতরে ভিতরে রং এর প্রভাব থাকলেও সেটা অতিরিক্ত নয়, স্বভাবত ঘরে দু তিনটের বেশি রং খুব একটা করি না। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে আগামীর পথে আমরা যে প্রতিদিন এগোচ্ছি, তাতে রং এর বহুল ব্যবহার চোখে পড়ার মতো বাড়ছে। পছন্দের তালিকাটাও একটু একটু করে বদলাচ্ছে। ঘর সাজাতে হালকা রং সবাই বেশি পছন্দ করে, কিন্তু তা বলে উজ্জ্বল রং যে ব্যবহার করা যাবে না এরকম কোনো ব্যপার নেই। বর্তমানে বিনোদন মানুষের মন কাড়ছে, টিভি, নাটক, সিনেমা দেখে লাল, নীল, কমলা, সবুজ নানা উজ্জ্বল রং বাড়ির দেওয়ালে উঠে আসছে। দেওয়ার রং শুধু নয়, চোখ ধাঁধানো নানা ফেব্রিক রং আসছে বাজারে। তাই কেমন রং এ ঘর সাজাবেন, একটু জেনে নেওয়া ভালো!
আবেগের সঙ্গে রং-এর সম্পর্কঃ
রং-এর ব্যবহার সম্পর্কে ধারণাটা জরুরি। উষ্ণতা ও শীতলতার বৈপরীত্যে টানাপোড়ন সবজায়গাতেই। আবেগের বিষয়ও রং এর বহির্ভূত নয়। বিস্মিতহলেন! ভাবছেন এ আবার কিরকম ব্যপার। আসলে রং-এর ও একটা নিজের ভাষা আছে, উত্তাপ আছে; একটু লক্ষ্য করলেই এগুলো চোখে পড়ে ও বোঝাও যায়। কোনো রং এর উষ্ণতা বেশি আবার কোনো রং এর শীতল স্পর্শ অনুভূতি বেশি। উজ্জ্বল রং, যেমন-লাল, কমলা, হলুদ রং একটু উষ্ন প্রকৃতির।এগুলো অনেকটা সূর্যর উত্তাপের রঙের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।অপরদিকে নীল ও সবুজ ঠান্ডা প্রকৃতির রং। এগুলোর কথা মনে করলেই খোলা নীল আকাশ ও চারিদিকে সবুজ মাঠের কথা মনে পড়ে। এক সুন্দর ছায়াশীতল অনুভূতি দেহ জুড়ে সৃষ্টি হয়।ঘরের ভিতর সুন্দর প্রশান্তির পরিবেশ গড়ে তুলতে রঙের বিন্যাস জানা দরকার।
রং-এর মেজাজের দ্বারা আমার বা আপনার মেজাজ অনেকটাই প্রভাবিত। ঘরে ঢোকাকালীন যদি কোনো কারনে মেজাজ চড়া থাকে তখন দেয়ালের রং হোক কিংবা ফেব্রিক একটা বাজে উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারে। আর বাইরের সুন্দর খোলামেলা শীতল স্পর্শ যদি আপনার ঘরের রঙের সাথে মিশে যায় তবে উত্তেজনা পূর্ণ মাথা নিজের বশে চলে আসে ও ঠান্ডা প্রকৃতির হয়ে যায়। যেকোনো অপরিচিত ব্যক্তি আপনার ঘরে ঢুকে আপনার পছন্দ সম্পর্কে মনে মনে একটা ধারনা করতে পারবে।সেটা কিরকম! ধরুন আপনার ইন্টেরিয়রে লাল রং শোভা পাচ্ছে তখনি ব্যক্তি বুঝে যাবেন আপনি আধুনিক, একটু স্টাইলিস্ট ও আগ্রাসী, অতিথি আপ্যয়ন এ বেশ তৎপর। রং এর এই মেজাজ পরিবর্তন এর ধারা গবেষণায় প্রমাণিত।
আবেগের প্রকাশ ঘটে ঘরের রং-এঃ
রং-এর নানা ব্যবহার আশা, হতাশা, আনন্দ, উদ্বেগ, আকাঙ্ক্ষা ও দুঃখবোধ এর মধ্যে যে শ্রেণিগত বিভেদ করতে সক্ষম। আবেগের মূল্যকেও প্রাধান্য দেয় এই রং। যেমন হলুদ রং বা হলুদ রং এর শেড খুশীর আমেজ বয়ে নিয়ে আসে। সোনালিও এরকম, ঐশ্বর্য আনে। কমলা রং আবার আনন্দ এর সঙ্গে গরম অনুভূতি নিয়ে হাজির হয়।শুধু অনুভূতিই শেষ নয়, নিউট্রাল কালার হিসাবে কার্যকরী। এছাড়া প্যাশন এর রং হল লাল। প্রেম থেকে শুরু করে নানা আকাঙ্ক্ষা, উত্তেজনা লালের প্রতিটা বিন্দুতে উপস্থিত।লাল এর সাথে গোলাপি হলে রোমান্স বাড়ে, আরোও বেশি রোমান্টিক হয়ে উঠবেন। রহস্যময়ী হলে বেগুনী শ্রেয়, আর নীল রং মানেই শান্ত ও রোমান্টিকতা। তাজা ও ঝরঝরে অনুভূতি সবুজে , কালোটাও রহস্যের ও বুদ্ধির প্রতীক। বাদামী বা চকোলেট শেড আনে রুচি বোধ। সাদ-কালো নিয়ে আসে ঠান্ডা এক আমেজ। সাদা, অফ হোয়াইট কিংবা ক্রিম ওর ব্যবহার ক্লাসিক, বিলাসীতা, অভিজাত এসবের পরিচয় দেয়। আবেগের প্রতিটা পরতে মিশে রয়েছে রং।
রং-এর বাহারটাও ঘরের শোভা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ফ্লোর থেকে বেডশীট সবের কালারেই একটা সমন্বয় আছে, সেটা ঠিকঠাক রাখাটা জরুরি। আপনার মুড, আসবাবপত্র সবেরই একটা পছন্দ আছে। বারবার একই রং করার ফলে আয়তন বড়ো দেখায় আবার ঠান্ডা রং এ স্পেস মাঝেমধ্যে বড় দেখায়।