আর্থ্রাইটিস সম্পূর্ণ ভালো হয় না, কিন্তু প্রদাহ কমানো যায়

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভিড় করে আসে হাজারও রোগ। এদের মধ্যে কিছু রোগ ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতি হয় কিন্তু সঠিক চিকিৎসায় সেরে যায়। আবার এমন কিছু রোগ আছে যা প্রাণঘাতি নয় বটে, তবে একবার হলে সারাজীবন থেকে যায়, কোনো ওষুধই একে ভালো করার জন্য যথেষ্ট নয়। এরকমই একটা রোগ হলো আর্থ্রাইটিস।
আর্থ্রাইটিস শব্দটি কমবেশি সকলের কাছেই খুব পরিচিত একটি শব্দ যা বাত এরই ভিন্নরূপ। হাড় অথবা হাড়ের জোড়ার প্রদাহই হল আথ্রাইটিস। এর বিভিন্ন প্রকার বর্তমান —
১। রিডমাটয়েড আর্থ্রাইটিস –
একধরনের দীর্ঘস্থায়ী বাতব্যথা,কর্মক্ষম দেহকলার ক্ষতিজনিত অস্বস্তিকর ব্যথা।অটো ইমিউন ডিজিস নামেও পরিচিত এই রোগ।দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শরীরকে প্রতিরক্ষার পরিবর্তে দেহের কোনো একটি জয়েন্টের বিরুদ্ধে কাজ করে,ফলে জয়েন্টে প্রদাহের জন্য প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়।
২। রিডমাটয়েড হ্যান্ড,
আক্রান্তকারীর হাতের আঙুলগুলো ফুলে কলাগাছের মতো হয়ে যায়।
৩। সোয়াননেক ডিফর্মিটি–
এই রোগে হাতের আঙুল বাঁকা হয়ে রাজহাঁসের গলার মতো হয়।বাটনহোল ডিফর্মিটি সূঁচ দিয়ে কাঁথা সেলাই এর ক্ষেত্রে তর্জনী যে অবস্থা হয়,অনুরূপ অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। আবার জেড ডিফর্মিটি রোগে হাতের আঙুল ইংরেজি বড় অক্ষর জেড এর মতো হয়,ফলে আঙুলের মাংস দুর্বল হয়ে পড়ে।
এই তিনটিকে একত্রে “রিডমাটয়েড হ্যান্ড “বলা হয়।
অস্টিওআর্থ্রাইটিস –
দুটি হাড়ের মাঝে তরুনাস্থির অবস্থানের কারনে খুব সহজেই হাঁটাচলা করা যায়।এই রোগে তরুনাস্থি ক্ষয়ে গিয়ে প্রবল ব্যথা অনুভূত হয়।বলা হয়,ভারবহনকারী জয়েন্টে এই রোগ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা।
অসহ্য ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে খাবার তো কিছু নিয়ম মেনে খেতে হবেই। এই ব্যাথা অনেকসময় হয় বংশগতও। শরীরের বিভিন্ন স্থানে শিরা ও স্নায়ুর সাহায্যে রক্তের সঙ্গে খাদ্যের সারাংশ দ্বারা ক্ষয়পূরণ করে। এই সমস্ত রুগিদের বিশেষত (বাত)কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।সকালে একটু ত্রিফলার জল খেয়ে নিলে এই সমস্যা দূর হবে ।রেড মিট যেমন গরু খাসি মোষ এর মাংস একেবারেই ছেড়ে দিতে হবে খাওয়া। তেলএবং চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে কই, মাগুর চুনো মাছ না খাওয়ায় ভালো।ফুলকপি, বাঁধাকপি, বরবটি,বিট খাওয়া চলবেনা।পুঁই শাক পালংশাক খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে
আর্থ্রাইটিস হলে প্রদাহ কমানো যায়প্রদাহ কমানোর উপায়
আর্থ্রাইটিস এর মোক্ষম ওষুধ ব্যায়াম। এই অসুখের বিকল্প হয়না ব্যায়াম ছাড়া।কোমরে ব্যাথা হলে কোমরের ব্যায়াম ঘাড়ে ব্যাথা হলে ঘাড়ের ব্যায়াম।
১) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খাবেন। অযথা মুড়ি মুড়কির মতো ব্যাথার ওষুধ খাবেন না।
২) অতিরিক্ত স্ট্রেস নেবেননা। অবসর সময় পরিবারের লোকের সাথে কাটান।মাসাজ সেন্টারের মাসাজ নেবেন না।
৩) শক্ত বালিশ বিছানাতে শোবেন না। পারলে মেঝেতে শুন।
আর্থ্রাইটিসের অন্যতম কারণ হল বয়োবৃদ্ধি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তরুনাস্থির ক্ষয়ে জলের পরিমান বৃদ্ধি পায়, ফলে প্রোটিন এর পরিমান কমতে থাকে। শারীরিক ওজন বেশি থাকলে বিভিন্ন জয়েন্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারনে এই রোগ হয়। তাই অতিকায় স্থূল ব্যক্তিদের এই রোগের সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়াও কতিপয় ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ যেমন ক্লিবসেলা ও এলার্জি স্বল্পমেয়াদী বাতব্যথার উদ্ভব ঘটিয়ে “রিএকটিভ আর্থ্রাইটিস”সৃষ্টি করে। গাউট আর্থ্রাইটিস বংশগত কারন হতে পারে, এছাড়া অতিরিক্ত মদ্যপান,খাবারে পিউরিনের আধিক্য, কিডনির বিরল রোগ, ডাইইউরেটিক জাতীয় ওষুধ সেবন, টিবি রোগের ওষুধ সেবন করলে হয়।পুরুষদের ৪০ বছরের পর আর মহিলাদের ৬০ বছরের পর সাধারণত এই রোগ হয়।
অতিরিক্ত শর্করা ও প্রোটিন জাতীয় খাদ্য খেলেও রোগ হয়। এছাড়া বেদনাদায়ক ওষুধ মুড়িমোয়ার মতো খেলে,ক্যালসিয়াম -ভিটামিন এর ওষুধ খেলে এই আর্থ্রাইটিস রোগটি হয়।
বিশেষত বলা হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম যাদের কম তাদের এই রোগটি বেশি ধরা পড়ে। বংশগত কারনে আর্থ্রাইটিসের সম্ভাবনা যথেষ্ট বেশি থাকে। যেহেতু এই রোগের কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নেই তাই পরিমিত জীবনযাপনই একমাত্র পন্থা।