‘আল্লাহু আকবর’ শব্দটির অর্থ কী?

আল্লাহু আকবর, মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রাণের ধ্বনি! অন্তরের থেকে উদ্গত যে যিকির আমাদের জান্নাতের রাস্তা সুগম করে।
যুন্নুন মিসরী (রহঃ) বলতেন,
“যার হৃদয় ও জিহ্বা আল্লাহর যিকিরে ব্যস্ত থাকে, আল্লাহ তার অন্তরে আল্লাহকে পাওয়ার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষার আলো ঢেলে দেবেন।”
মু’আয ইবনে জাবাল (রাযিঃ) একদিন কিছু মানুষকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “আদম সন্তানের জন্য আল্লাহর যিকির ছাড়া জাহান্নাম থেকে বাঁচার আর কোনো সহজ উপায় নেই।”
তখন উপস্থিত লোকেরা বলল; “হে আবু আবদুর রহমান, আল্লাহর পথে জিহাদও না?”
তিনি তখন বললেন, “না, যদিও সে এমনভাবে জিহাদ করে যে তাঁর তলোয়ার ভেঙ্গে যায়। কারণ, আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “এবং আল্লাহর যিকিরই সর্বোত্তম।”
ইবনে উমর (রাযিঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্জের প্রথম দশ দিন সম্পর্কে বলেছেন:
“আল্লাহর কাছে এই দশ দিনের চেয়ে বেশি প্রিয় অন্যকোনো দিন নেই, সুতরাং এ দিনগুলোতে অনেক বেশি তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ করতে থাকো” (মুসনাদে আহমাদ)
তাকবীর বলতে বোঝায়, ‘আল্লাহু আকবর’।
সাহাবায়ে কেরামদের রীতি ছিল যে, যিলহজ্জের প্রথম দশ দিন তারা বাজারে গিয়েও তাকবীর পাঠ করতেন।
সেই সময় বাজারের লোকেরা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে তাদেরকে অনুসরণ করতেন।
আল্লাহু আকবরঃ পবিত্র তাকবীরঃ
এটি আপনার ব্যক্তিগত ওজীফা যে, আল্লাহ সবার চেয়ে মহান, তাঁর চেয়ে বড় বা তাঁর চেয়ে ক্ষমতাশীল আর কিছুই নেই।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আদি বিন হাতিমকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার সময় বলেছিলেন,
“হে আদী, তুমি কোন জিনিস থেকে পালাচ্ছ? আল্লাহর চেয়ে বড় আর কোনো কিছুর কথা কি তুমি জানো?” (মুসনাদে আহমাদ, জামে তিরমিযী)
আপনার চারিপাশে আল্লাহর মহত্ত্বের অসংখ্য নমুনা রয়েছে তা জেনে আপনি জীবন অতিবাহিত করুন।
যে কোনো নেতিবাচক আবেগ, অসুস্থ ইচ্ছা বা সমস্যা তাঁর মহত্ত্বের তুলনায় দুর্গম বর্ণহীন মনে হয়।
একাকী তাঁর দিকে ফিরে এসে। তাঁর কাছে একাকী প্রার্থনা করে।
তাঁর উপর নির্ভর করে, কাউকে তাঁর সমকক্ষ স্থাপন না করে।
একাকী তাঁর ইবাদত করে, তাঁর মাহাত্ম্যকে নিশ্চিত করেই আপনি বুঝতে পারবেন যে,
তাঁর মাধ্যমেই, তাঁর দ্বারাই সকল কিছু সম্ভব।
ঈদের দিন তাকবীরঃ
ঈদের দিন অধিক পরিমাণে তাকবীর পাঠের কথা হাদিসে এসেছে।
৯ জিলহজ্জ ফজরের নামাজ থেকে ১৩ জিলহজ্জ আছরের নামাজ পর্যন্ত প্রত্যেক নামাজের পর একবার তাকবীর পাঠের কথাও হাদিসে এসেছে।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতক সাহাবী যেমন আলী (রাযিঃ), উমর (রাযিঃ), ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এবং সালমান (রাযিঃ) এর থেকে “আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়া লিল্লাহি’ল হামদ” তাকবীর বর্ণিত আছে।
পাশাপাশি অন্যদের থেকে অন্য তাকবীরও বর্ণিত আছে। আর এই তাকবীর একমাত্র আল্লাহর জন্যই।
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন, “ইজ্জত-সম্মান হচ্ছে আমার পোশাক এবং গর্ব-অহংকার (মহত্ব) হচ্ছে আমার চাদর।
তাই যে ব্যক্তি এ দুটির কোনো একটি নিয়ে টানাটানি করবে, তাকে আমি কঠোর শাস্তি দেবো।” (সহিহ মুসলিম)।
ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) বলেছেন, “আল-মুতাকব্বির (যিনি নিজের মহত্ত্বকে স্বীকৃতি দেন) হচ্ছেন তিনি, যিনি নিজের সাথে তুলনা করলে সকল কিছুকে তুচ্ছ মনে করেন। তিনি নিজেকে ছাড়া অন্য কারও মাঝে মহানতা বা মহিমা দেখেন না। তিনি অন্য সকলকে রাজার কাছে প্রজার মত দেখেন।
যদি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক হয় তবে তিনি সত্যই আল-মুতাকাব্বির এবং পরাক্রমশালী ও মহান আল্লাহ ব্যতীত এটি কোনোভাবেই কারও জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।”