আল্লাহ আল-খবীর: কোনো কিছু তাঁর থেকে গোপন নয়

আল্লাহর সুন্দর গুণবাচক নামগুলির মধ্যে একটি হল আল-খবীর। আল্লাহ আল-খবীর নামটির অর্থ হল ‘সকল বিষয়ের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দিক সম্পর্কে সম্যকভাবে অবগত’।
কোনোকিছু তাঁর থেকে গোপন রাখা উচিৎ নয়।
ইমাম গাজ্জালী(রহঃ) বলেন যে,
ইলম (জ্ঞান) যখন গোপন রহস্যের সাথে সম্পর্কিত হয়, তখন তাকে খিবির বলা হয়।
সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা হলেন আল-খবীর, যার জ্ঞান সকল বিষয়ের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয়টিকেই অন্তর্ভুক্ত করে। তিনি কেবল আমাদের বাহ্যিক ক্রিয়াকলাপই জানেন না, তিনি আমাদের হৃদয়ের অবস্থাও জানেন।
আল্লাহ আল-খবীরের উল্লেখঃ
আল্লাহর এই নামটি কোরআনে ৪৫ বার উল্লেখিত হয়েছে, কখনও একা এবং কখনও অন্য নামের সাথেঃ
“চক্ষুসমূহ তাকে আয়ত্ব করতে পারে না। আর তিনি চক্ষুসমূহকে আয়ত্ব করেন। আর তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।” (৬:১০৩)
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেছেনঃ
“সে কি জানে না, কবরে যা আছে তা যখন উত্থিত হবে, আর অন্তরে যা (কিছু লুকানো) আছে তা প্রকাশ করা হবে, নিঃসন্দেহে তাদের প্রতিপালক সেদিন তাদের সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত থাকবেন।” (১০০:৯-১১)
আল্লাহ আল-খবীর ও তাঁর আয়াতের বোধগম্যতাঃ
এ আয়াতগুলি থেকে আমরা কি বুঝতে পারি?
আমাদের উপর আরোপিত সকল বিধিবিধানের বিষয়ে আল্লাহ বিশেষজ্ঞ, কারণ তিনি আমাদের এবং এই পৃথিবীর প্রকৃতি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানেন।
আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের ভাল মন্দ সকল বিষয় সম্পর্কেই সম্যকভাবে অবগত। তাই কোন জিনিসে আমাদের ভাল হবে আর কোন জিনিসে খারাপ হবে আল্লাহ তা জেনেই আমাদের উপর বিভিন্ন বিধান আরোপ করেছেন।
এটা জেনেই তিনি আমাদের জন্য বিভিন্ন ফয়সালা করেন। অনেক সময় আমাদের মনে হয় – ‘আল্লাহ কেন আমার দু’আয় সাড়া দিচ্ছেন না?’
হয়ত আমার দু’আয় এমন কিছু ছিল যা আমার জন্য ভাল হত না, তাই তিনি তা দান করে নি। কারণ, আল্লাহ তা’আলা হলেন আল-খবীর।
এর উত্তরই আল্লাহ কুরআনে দিয়েছেনঃ
“মানুষ (তার নির্বুদ্ধিতার কারণে কল্যাণকর ভেবে) অকল্যাণ প্রার্থনা করে যেমনভাবে কল্যাণ প্রার্থনা করা উচিত। মানুষ বড়ই তাড়াহুড়াকারী” (১৭:১১)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সচেতন এবং সকল গোপন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ।
একদিন যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে জানালেন যে, তারা জান্নাতবাসীদের মধ্য থেকে একজনকে দেখতে যাচ্ছেন।
তখন তারা সকলেই জানতে উদগ্রীব হলেন যে, তিনি আসলে কি আমল করেন?
এমনকি একজন সাহাবী তাঁর বাড়িতেও ৩ দিন আশ্রয় নিলেন তিনি কি করেন তা দেখার জন্য।
কিন্তু সাধারণের বাইরে কোনো আমল তাঁর থেকে দেখতে পেলেন না। পরে তিনিই সাহাবী থেকে জানতে পারলেন তিনি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় সকলকে ক্ষমা করে দেন। কারও জন্য অন্তরে বিদ্বেষ রাখেন না। একইভাবে আবু বকর (রাযিঃ) অতিরিক্ত নামাজ ও রোযার কারণে নয় বরং তাঁর অন্তরে উপস্থিত গুণের জন্য এত উভয় মর্যাদায় উন্নীত হয়েছিলেন।
তাদের এসকল আমলের কোনো খবর কিন্তু মানুষের ছিল না, একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই এ আমলগুলি সম্পর্কে জানতেন। কারন, তিনি আল-খবীর।
আল-খবীর গুণের সাথে আমরা যেভাবে সংযুক্ত হব
১। নিজেকে জানুন এবং যেকোনো কাজে হৃদয়কে প্রশ্ন করুন, আল্লাহ আল-খবীর তাই উপদেশ দেন
ইমাম গাজ্জালী(রহঃ) বলেছেন, “প্রতিটা মানুষের ভিতরেই একটি আলাদা দুনিয়া বিরাজ করছে।
মানুষের হৃদয়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, তার ভিতরে অবস্থিত বিভিন্ন গোপন বিষয় ইত্যাদি সবই একেকটি আলাদা দুনিয়া।
এ কারণেই, যে নিজেকে চিনতে পারে সে সৃষ্টিকে চিনতে পারে, আর যে সৃষ্টিকে চিনতে পারে সে স্রষ্টাকেও চিনতে পারে”
২। গোপন বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ যা জ্ঞান প্রদান করেন তার উপর ভরসা করুন
আমাদের জীবনে অনেক কিছুই ঘটে আমরা যা প্রত্যাশা করি না, আবার যেগুলা প্রত্যাশা করি তার সবই ঘটে না।
এ কারণে অনেকসময় আমরা হতাশ হয়ে পড়ি।
তবে হতাশ না হয়ে আমাদের এটি মনে করা দরকার, আমরা তো কোনকিছুর ভাল-মন্দ সম্পর্কে জানি না। বরং, আল্লাহ সকল কিছুর গোপন রহস্য সম্পর্কে জানেন। তাই আল্লাহ তা’আলা যেটা ফয়সালা করেছেন সেটির মধ্যেই আমার কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
আর এজন্য সকল অবস্থাতে আল্লাহর উপরেই আমাদের ভরসা রাখতে হবে। আল্লাহ আল-খবীরের কাছ থেকে কোনো কিছুই লুকিয়ে রাখা যায় না।
৩। বাহ্যিক ক্রিয়াকলাপের অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন, আল্লাহ আপনার সহায়ক হবেন
আল্লাহ আল-খবীর আমাদের পবিত্র জ্ঞান প্রদান করেন। সকল বিষয়ের অভ্যন্তরীণ দিক যদি আমাদের বুঝে আসে তবে এটি আমাদের অন্তরকে প্রশান্ত করবে। যেকোনো ইবাদতের কথাই কল্পনা করুন। যখন নামাজে আমরা ‘আল্লাহু আকবার’ বলি তখন যদি আমাদের অন্তরে আল্লাহর বড়ত্বের কিছুটা হলেও অনুধাবন আসে তবে এটি আমাদের নামাজকে কতটা প্রাণবন্ত করবে তা একটু চিন্তা করুন!