আসুন আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং নৈকট্য হাসিল করি

আল্লাহর স্মরণ
কুরআন মজীদে আল্লাহর স্মরণ বেশি বেশি করতে বলা হয়েছে। অন্য কোনো ইবাদত সম্পর্কে এমন কথা বলা হয়নি। কারণ আল্লাহর যিকির তথা আল্লাহর স্মরণ এমন এক বিষয়, যা মানুষকে সব ধরনের গুনাহ থেকে রক্ষা করে এবং শরীয়তের হুকুম মোতাবেক চলতে সাহায্য করে। উপরন্তু তা এত সহজ যে, এর জন্য আলাদা করে বেশি সময় ব্যয় করার কিংবা অন্যান্য কাজ স্থগিত রাখার প্রয়োজন হয় না।
আল্লাহর স্মরণ হচ্ছে যাবতীয় ইবাদতের রূহ। ইবনুল কাইয়্যুম রহঃ বলেন, কুরআনের ওয়াদা অনুযায়ী যখন কোনো বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করে তখন আল্লাহ তাকে স্মরণ করেন।
স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, “তোমরা আমাকে স্মরণ কর আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং শোকর গোযারি কর, না-শোকরি করো না। (আল কুরআন-২:১৫২)
অর্থাৎ, আল্লাহকে স্মরণ ধ্যানময় একটি ইবাদত। মুমিন বান্দা সবসময় জিকিরে নিমগ্ন থাকে। শত ব্যস্ততা তাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করতে পারে না, যিকির ছাড়া মুমিন হওয়া কল্পনাতীত। যিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
হাদিসে কুদসিতে এসেছে, “আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার ব্যাপারে যেমন ধারণা করে আমাকে তেমনি পাবে। যখন সে আমার স্মরণ করে আমি তার সঙ্গে থাকি। সে যদি গোপনে আমাকে স্মরণ করে তাহলে আমিও তাকে একাকী স্মরণ করি। আর যদি সে কোনো মজলিসে আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তার চেয়ে উত্তম মজলিসে তাকে স্মরণ করি।” (মুসলিম)
যিকিরকারীর অন্তর চিরজীবন্ত
একমাত্র যিকিরের মাধ্যমে শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআনে এসেছে, “যারা মুমিন, শয়তান যখন তাদের কুমন্ত্রণা দেয়, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। ততক্ষণাৎ তাদের চোখ খুলে যায়।” (আল কুরআন-৭:২০১)
যিকিরকারীর অন্তর চিরজীবন্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি তার রবের যিকির করে, আর যে যিকির করে না, তাদের দৃষ্টান্ত হল জীবিত ও মৃতের মত।” (বুখারি)।
জিহ্বার এ ইবাদত সুস্থ, অসুস্থ, দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া সর্বাবস্থায় করা যায়। আল্লাহ তা’আলা যিকির করার তাগিদ দিয়ে ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা বেশি বেশি করে আল্লাহর যিকির কর।” (আল কুরআন-৩৩:৪১)
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মানুষের দেহে একটা গোশতের টুকরা আছে, তা যদি ভালো হয়ে যায় তা হলে সারা দেহ ভালো হয়ে যাবে। আর তা যদি নষ্ট হয়ে যায় তা হলে সারা দেহ নষ্ট হয়ে যাবে। আর তা হচ্ছে কলব।”
অন্য হাদিসে এসেছে, “প্রতিটি জিনিস পরিষ্কার করার যন্ত্র আছে; আর অন্তরের ময়লা পরিষ্কার করার যন্ত্র হচ্ছে আল্লাহর স্মরণ বা যিকির।”
রাসূলের বাণী
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রাযি.) বর্ণনা করেছেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, হে আল্লাহর রাসূল! রোজ হাশরে আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ বিবেচিত হবে কে? তিনি বললেন, যারা বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করে।
তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহর রাস্তায় যারা জিহাদ করে তাদের চেয়েও? তিনি বললেন, সত্য প্রত্যাখ্যানকারী ও মুশরিকদের আঘাত করতে করতে যদি কারও তরবারি ভেঙে যায় এবং রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়, এরপরও যিকির কারীরাই তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ।” (তিরমিযী)
হাদিসের শরণাপন্ন হোন
আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং নৈকট্য হাসিল হয়। আল্লাহকে সর্বাবস্থায় হাজির-নাজির জানার মধ্যেই আল্লাহর যিকিরের তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। কীভাবে আল্লাহর যিকির করতে হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা কুরআনে পাক ও হাদিস শরীফে রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, “তোমার রবের যিকির করবে মনে মনে বিনয়ের সঙ্গে, বিনম্র চিত্তে, অনুচ্চ স্বরে; প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায়; কখনও তুমি উদাসীন হয়ো না” (আল কুরআন-৭:২০৫)
মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ঈমানদার বান্দাগণকে কায়মনে বাক্যে তার স্মরণ বা যিকির করার জন্য আদেশ করেছেন। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা বেশি বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ (যিকির) কর। আর সকাল-সন্ধ্যা তার তসবীহ (প্রশংসা) পাঠ কর।” (আল কুরআন-৩৩:৪১-৪২)
এই আয়াতের অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সাধারণভাবে সব সময়, সকল অবস্থায় তাঁর যিকির করতে আদেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ইবাদত সম্পন্ন করার পর আল্লাহর যিকির করার কথাও তিনি বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা যখন নামাজ পড়া শেষ করবে, তখন দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ (যিকির) করবে”। (আল কুরআন-৪:১০৩)
আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে বেশি বেশি তাঁর স্মরণে মগ্ন থাকার তৌফিক দান করেন। আমীন।