ইরানের গ্রন্থাগার ও তার গৌরবের ইতিকথা

বই আর লাইব্রেরি নিয়ে অনেক কথা বলতে বলতেই আজ আমরা ইরান প্রদেশের কথা বলব।
ইরানের গ্রন্থাগার ও তার গৌরবময় সূচনাঃ
আদুদ আল-দৌলা (৯৪৯-৯৮২) নাম অনেকের কাছেই সুপরিচিত। মূলত তিনি ছিলেন বুয়াইদ রাজবংশের (৯৩৪-১০৬২) যথেষ্ট ক্ষমতাবান এবং প্রতিপত্তিশালী আমির।
তিনি তাঁর বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। এই সময়ে যেসকল বৈজ্ঞানিক প্রকল্পগুলি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তার পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য তাঁকে বিশেষভাবেই কৃতিত্ব দেওয়া হয়।
ইস্পাহানে তাঁর আদেশে একটি মানমন্দির তৈরি করা হয়েছিল যেখানে জ্যোতির্বিদ আবদুল-রহমান সুফি (৯০৩-৯৮৬) কাজ করেছিলেন।
তিনি একটি বিখ্যাত জনকল্যাণমূলক প্রকল্পও নিয়েছিলেন।
ইরানের শিরাজে তিনি ইসলামের সূচনা থেকে তাঁর সময় পর্যন্ত রচিত গ্রন্থসহ একটি গৌরবময় গ্রন্থাগার স্থাপন করেছিলেন। এটি রাজবাড়িতে অবস্থিত ছিল।
সেখানে প্রচুর পরিমাণে লম্বা বইয়ের তাক ছিল; কাঠের আসবাবপত্র ছিল যেন সোনার রং দিয়ে আঁকা।
জ্ঞানের প্রতিটি শাখার জন্য আলাদা ঘর ছিল। গ্রন্থাগারটির দেখাশোনা কোষাধ্যক্ষ এবং একজন পরিচালক করেছিলেন।
কেবল নামীদামী আলেমদের লাইব্রেরিতে প্রবেশাধিকার ছিল।
ইরানের আরও বিবিধ গ্রন্থাগারের পরিচয়ঃ
ইরান-এর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাগারগুলি হল শরীফ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি-এর মধ্যে অবস্থিত আবদুস সালাম গ্রন্থাগার।
অধ্যাপক ড.আবদুস সালাম (১৯২৬-১৯৬৬) পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলপ্রাপক এবং মুসলিম বিশ্বের এই প্রথম নোবেল বিজয়ীর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে।
আবু-ফাদল ইবনে আল-আমিম (৯৭০)-এর পাঠাগারটিও শিরাজ শহরে ছিল। এর পরিচালক ছিলেন ইবনে মিসকাওয়াহ (৯৩২-১০৩০)।
যিনি ছিলেন বুয়াইদ যুগের স্বেচ্ছাসেবক কর্মকর্তা, ইরানের রেয়ের দার্শনিক ইতিহাসবিদ।
তিনি ‘আদুদ আল-দাওলা’ সহ একাধিক ভিজিয়ারের সেক্রেটারি- লাইব্রেরিয়ান হিসাবে কাজও করেছিলেন।
আদুদ আল-দৌলার অন্যতম সচিব আবুল কাসিম ইসমাল (সাহেব ইবনে আল-আবাদ) ছিলেন। তাঁর সংগৃহীত গ্রন্থাগারটি ছিল রীতি মতো উল্লেখযোগ্য। তিনি কেবল বই সংগ্রহ করতে আগ্রহী ছিলেন না, তাঁর সঙ্গে ছিলেন কবি, লেখক এবং একজন তার্কিক। যৌবনে তিনি আবুল ফাদল ইবনুল-অমিদের সহচর ছিলেন। তাই তাঁকে সাহেব বলা হত। ইবনুল-অমিদের মৃত্যুর পরে (৯৭০) তিনি প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। সামানিদ শাসক নুহ ইবনে মনসুর যখন তাকে মন্ত্রীর পদ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন,
‘আমার পাঠাগারটি এত বড় যে, এটি ৪০০টি উটের উপর ভর করা যায় না।’
ইরানের বিভিন্ন গ্রন্থাগার নিয়ে আলোচনা করতে করতেই আমরা তুস গ্রন্থাগার নিয়ে দু-চারটি কথা বলা যেতে পারে। তুস ইরানের অন্যতম প্রাচীন শহর। এটি নিয়াজম আল-মুলক, নাসির আল-দীন তুসি এবং কবি বিজয়ী ফিরদৌসির মতো দুর্দান্ত ব্যক্তিত্বদের উল্লেখযোগ্য নির্মাণ। তুস গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিজাম আল-মুলক।
মাশহাদ গ্রন্থাগারটি হজরত আলী ইবনে মুসা আল-রাযা, 8 তম শিয়া ইমামের (৮১৮) মাজারের সাথে সংযুক্ত ছিল।
গ্রন্থাগারটি ৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখানে কুরআন, হাদীস, দর্শন, যুক্তি ও আইনশাস্ত্র সম্পর্কিত বই রয়েছে। গ্রন্থাগারের ক্যাটালগটি বেশ কয়েকটি খণ্ডে “ফিহরিস্ট কুতুব খান আস্তানা কুদস রিজভী”। বর্তমানে ইরানের মাশহাদে আস্তান কুদস রাজাভিসের একটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার একটি বৃহৎ গ্রন্থাগার রয়েছে। এটির পরিমাণ ১.১ মিলিয়নেরও বেশি। এটি ইসলামী গবেষণার আন্তর্জাতিক কেন্দ্র, যেখানে বহু পুস্তক এবং ইসলামী ইতিহাসের প্রাচীনত্বের বিরল রচনা রয়েছে।