একজন মহিলার প্রার্থনার জবাবে একটি সম্পূর্ণ সূরা নাযিল হয়

কে তিনি ? এই ভাগ্যবতী মহিলা সাহাবী হলেন হযরত খাওলা বিনতে সালাবা (রাযিঃ)। তিনি হলেন একমাত্র মহিলা সাহাবী যার নাম কোনো নবী পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট না হয়েও কুরআনে এসেছে।
তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর একজন সম্মানিত মহিলা সাহাবী যার প্রার্থনা স্বয়ং আল্লাহ শ্রবণ করেছিলেন এবং তার উত্তরে একটি সম্পূর্ণ সূরা নাযিল করেছিলেন। । তিনি এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন,
“আমার স্বামী আউস ইবনে সামিত (রাযিঃ) ছিলেন আমার থেকে বয়স্ক এবং বদমেজাজী। প্রায়ই তিনি আমার সাথে ঝগড়া করতেন। একবার ঝগড়া প্রচন্ড আকার ধারণ করলে, তিনি রাগের মাথায় আমাকে এই কথা বলে তালাকে জিহার দেন, “তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পিঠের মত।” অর্থ্যাৎ আমার মা যেমন আমার জন্য হারাম, ঠিক তেমনি তুমি আমার জন্য হারাম।”
খাওলার ফরিয়াদ
এটি ছিলো জাহিলি যুগে তালাক দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া। ইসলাম গ্রহণের পূর্বেও তিনি কয়েকবার এরূপ করেছিলেন। কিন্তু যতবারই এরূপ ঘটতো, আউস খাওলার সাথে পরদিনই তা মিটমাট করে নিতেন।
ইসলাম গ্রহণের পর তালাকের এই ঘটনা ঘটলে হযরত খাওলা বিনতে সালাবা (রাযিঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে গমন করেন এবং বিস্তারিতভাবে এই ঘটনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে জানান। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এর সমাধান আশা করেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ওই যুগের নিয়ম অনুযায়ী বলে দেন যে, ‘তোমার তালাক হয়ে গেছে। তুমি তার উপর হারাম হয়ে গেছ।’ কিন্তু খাওলা এটি মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি তার স্বামীর বৃদ্ধ হওয়ার কথা জানান এবং তার ছোট ছোট বাচ্চার কথা জানান। তাঁর বারবার ফরিয়াদের পর যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মুখ ফরিয়ে নেন তখন তিনি স্বয়ং আল্লাহর কাছে এই সমস্যার সমাধানের জন্য প্রার্থনা করেন। এই প্রেক্ষিতে আল্লাহ একটি সম্পূর্ণ সূরা নাযিল করেন। সূরাটির প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে,
“যে নারী তার স্বামীর বিষয়ে আপনার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং অভিযোগ পেশ করছে আল্লাহর দরবারে, আল্লাহ তার কথা শুনেছেন। আল্লাহ আপনাদের উভয়ের কথাবার্তা শুনেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন।” (আল কুরআন-৫৮:১)
প্রার্থনকারীর প্রার্থনা আল্লাহ শুনছেন
এটি এমন একটি সূরা যার প্রতিটি আয়াতে আল্লাহর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনাকারী নারীর প্রার্থনা যে আল্লাহ গুরুত্বের সাথেই শুনেছেন, সূরার প্রতিটি আয়াতে আল্লাহর নামের উল্লেখ সেই প্রমাণই বহন করছে।
আল্লাহর রাসূলের সাহাবীগণ এই নারী সাহাবীকে প্রভূত সম্মান করতেন। হযরত উমর (রাযিঃ) একবার জারুদ নামক এক ব্যক্তির সাথে পায়চারি করছিলেন। তখন হযরত খাওলা (রাযিঃ) এসে তার পথরোধ করে তাকে বললেন,
“হে উমর! আমি তোমাকে তখন থেকে চিনি যখন তুমি উকাযের মেলায় তোমার পশুপাল নিয়ে যেতে। তোমাকে তখন উমায়ের বলে ডাকা হতো। জনগনকে শাসনের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।”
হযরত উমর (রাযিঃ) কান্নায় ভেঙে পড়লে জারুদ খাওলা (রাযিঃ)কে বললেন, “কি সমস্যা তোমার বুড়ি? আমিরুল মুমিনের তুমি সাথে এভাবে কথা বলছ কেনো?”
হযরত উমর (রাযিঃ) জারুদকে থামিয়ে বললেন, “তুমি কি জানো ইনি কে? ইনি হলেন খাওলা; যার ডাক আল্লাহ সাত আসমানের উপর থেকে শুনেছিলেন। আর আমি তার কথা শুনব না?”
খাওলা (রাযিঃ)-র ব্যক্তিত্ব
ইবনে কাসিরের বর্ণনায় আরেকটি বিবরণে পাওয়া যায়, একবার উমর (রাযিঃ) একজন অভিজাত কুরাইশ ব্যক্তির সাথে কথা বলছিলেন। তখন খাওলা (রাযিঃ) উপস্থিত হলে উমর (রাযিঃ) কুরাইশ অভিজাত ব্যক্তিকে সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য করে তার কথা শুনতে থাকেন। তিনি যতক্ষণ ছিলেন, হযরত উমর (রাযিঃ) বিনীতভাবে তার বক্তব্য শুনতে থাকেন। খাওলা (রাযিঃ) চলে যাওয়ার পর তার এরূপ আচরণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে উমর (রাযিঃ) বলেন,
“ইনি হচ্ছেন সেই মহিলা যার প্রার্থনা আল্লাহ সাত আসমানের উপর হতে শুনেছিলেন। তিনি খাওলা বিনতে সালাবা (রাযিঃ)। আল্লাহর কসম, তিনি যদি আমাকে রাত পর্যন্ত এখানে দাঁড় করিয়ে রাখতেন, আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম। শুধু নামাজের সময় তার অনুমতি নিয়ে নামাজ আদায় করে আসতাম।”
আল্লাহ সর্বদাই আমাদের প্রার্থনা শোনেন এবং আমাদের জন্য উত্তম অবস্থা নির্ধারণ করে রাখেন। আমাদের উচিত সর্বদাই আমাদের সব চাহিদাই আমাদের রবকে জানানো। দু’আ তাৎক্ষণিকভাবে কবুল না হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তিনি আমাদের দু’আ শোনেননি। বরং, তিনি আমাদের জন্য উত্তম বিকল্প নির্ধারণ করে রেখেছেন।