কী কী পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ঢেঁকিছাঁটা চাল বা ব্রাউন রাইস

বাংলাদেশে এবং ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে মাছ-ভাত খাওয়ার বিশেষ চল আমরা লক্ষ করে থাকি। মাছের সঙ্গে যোগ্য জুটি যেন ধোঁয়া-ওঠা সাদা ভাত। তবে শুধুমাত্র মাছের সঙ্গেই নয়, রকমারি তরকারি কিংবা মাংসের সঙ্গে অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারেই আপনি ভাত খেতে পারেন। সাধারণত আমরা সাদা ভাতের সঙ্গে বিশেষভাবে পরিচিত। এই প্রসঙ্গে আরও কয়েকটা বিষয় উল্লেখ করা যায়। সাদা চাল বা ভাতেরও রয়েছে নানান রকমফের যেমন- সরু বাসমতি চাল ব্যবহার করা হয় বিরিয়ানি প্রস্তুতির সময়, অন্যদিকে গোবিন্দভোগ চাল ব্যবহার করা হয় সুস্বাদু এবং মিষ্টি পোলাও বানানোর জন্য।
সাদা ভাতে ক্যালরি বেশি?
অনেক সময়ে গোবিন্দ ভোগ চাল দিয়ে মিষ্টি জাতীয় পদ পায়েসও প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। তবে দুপুরে গরম ভাত খাওয়ার তৃপ্তি বোধহয় আলাদা, তার সঙ্গে যদি থাকে একটু ঘি দিয়ে সেদ্ধ আলু মাখা, কাঁচালঙ্কা এবং পেঁয়াজ। গরম ভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছ ভাজা এবং তেলের মতো উপাদেয় পদ আর কিছু হয় বলে জানা যায়নি। কিন্তু খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং আমাদের রসনাকে পরিতৃপ্ত করলেও সাদা ভাতের রয়েছে এক বিষম বিপদ। উচ্চ পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ সাদা ভাত একদিকে যেমন শরীরের ক্যালোরি বাড়ায়, তেমনই আবার অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট শরীরে জমা হয়। যা পরবর্তীক্ষেত্রে বিভিন্ন রোগের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু ভাত ছাড়া দুপুরের খাবারের আয়োজন যাদের মুখে রোচে না, তাদের জন্যই রয়েছে বিকল্প একধরনের রাইস বা চালের ভাবনা… নাম হল ব্রাউন রাইস। আদতে ব্রাউন রাইসের বর্ণ খয়েরি বা বাদামি। এর পিছনে একটা কারণ অবশ্যই রয়েছে।
আধুনিক এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা হয়তো ব্রাউন রাইস শব্দটির সঙ্গে বেশি পরিচিত। কিন্তু প্রাচীন গ্রাম বাংলায় এই ব্রাউন রাইসই পরিচিত ছিল ঢেঁকিছাঁটা চাল নামে। সাধারণত সাদা চালের ক্ষেত্রে যে প্রসেসিংটা করা হয়ে থাকে, এই চালের ক্ষেত্রে তা করা হয় না। সবথেকে মজার বিষয় এইখানেই যে প্রসেসিং করা হয় না বলেই এই চালের ক্ষেত্রে পুষ্টিগুণ কমে যাওয়ার কোনও রকম সম্ভাবনাই নেই। উপরন্তু বলতে পারি সাদা চালের থেকে ঢেঁকি ছাঁটা চালের পুষ্টিগুণ অনেকটাই বেশি। এই প্রকার চালের উপর অংশে ধানের তুষের অংশটুকু লেগে থাকে। যারফলে এর রং বাদামি বা খয়েরি হয়।
ব্রাউন রাইসের প্রাথমিক পরিচিতি পর্বটুকু দিয়ে আমরা সংক্ষেপে এর পুষ্টিগুণ বিষয়ে আলোচনা করতেই পারি।
১। ব্রাউন রাইসের উপরি অংশে যেহেতু তুষের মতো একধরনের আবরণ লেগে থাকে, তাই এই রাইস বেশি পরিমাণে ফাইবার এবং মিনারেল ধরে রাখতে সক্ষম। সাধারণ সাদা ভাতের মতো ব্রাউন রাইসও উচ্চ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ। একইসঙ্গে এতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে আমাদের দেহের চর্বি নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।
২। এতে রয়েছে পলিফেলন, ফাইবার এবং ফাইটিক অ্যাসিড। আমাদের মধ্যে অনেকেই যারা ব্লাড সুগারের সমস্যাতে ভুগছেন তারা অবশ্যই ব্রাউন রাইস খেতে পারেন। ব্রাউন রাইস শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৩। ব্রাউন রাইস কিন্তু হজম হতে সময় নেয়। ফলে একটা দীর্ঘ সময় জুড়ে পেট ভর্তি যেমন থাকে, তেমনই আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালোরি সরবরাহ করে, শরীরকে কাজ করার জন্য শক্তি প্রদান করে থাকে।
৪। এই রাইসে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ক্যালশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম, বলাবাহুল্য এই দুই খনিজ উপাদানই হাড় এবং দাঁত মজবুত করতে বিশেষভাবে সহায়ক।
৫। ভিটামিন বি এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এই রাইস শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার পাশাপাশি শরীরকে উপযুক্ত পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে।
হাইপারটেনশনের সমস্যা থাকলে
৬। অধিক ফাইবার এবং কম গ্লাইসেমিক উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ার দরুণ এই রাইস মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
৭। হাইপারটেনশন এবং হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা অবশ্যই এটি খেতে পারেন। সমীক্ষা অনুসারে ব্রাউন রাইস শরীরে রক্ত সঞ্চালনের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।
৮। আগেই বলা হয়েছে ব্রাউন রাইস ফাইবার সমৃদ্ধ। যার কারণে আমাদের পরিপাকতন্ত্র বা পরিপাকনালী যন্ত্রেরও উন্নতি ঘটে। ফাইবার থাকার জন্য গলস্টোন হওয়ার ঝুঁকিও অনেকটাই কম হয়।
৯। এতে রয়েছে ফোলিক অ্যাসিড, যা শিশুর জন্মকালীন বিভিন্ন ত্রুটি নিরাময়েও সাহায্য করে থাকে।
১০। ব্রাউন রাইস আমাদের নার্ভাস সিস্টেমকে ভাল রাখতে সাহায্য করে।
সুতরাং, ভাত ছাড়া যাদের নিতান্তই দুপুরের কিংবা রাতের খাবার ঠিক জমে না কিন্তু তার সঙ্গে রয়েছে শারীরিক নানা সমস্যা তারা অবশ্যই ব্রাউন রাইস খেতে পারেন। মনে রাখবেন সাদা ভাতের মতো অতটা সুস্বাদু না হলেও ব্রাউন রাইসের পুষ্টিগুণ অনেকটাই বেশি।