কুমারী নারীদের জন্য সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর ৫টি পরামর্শ

আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন অনেক নারী আছেন যারা এখনও কুমারী এবং বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান করছেন। কুমারী নারীদের বিবাহের পরে যেহেতু নতুন সাংসারিক জীবন শুরু হবে এবং এক ব্যস্তময় জীবনে তারা প্রবেশ করবেন তাই বিবাহ পর্যন্ত এই অবসর সময়টিকে কিভাবে সর্বোত্তমভাবে কাটানো যায় সে সম্পর্কেই আজকের এই নিবন্ধের আলোচনা।
যদিও বিবাহ জীবনের একটি বিশাল মাইলফলক, তবে শুধুমাত্র এটির দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, আমাদের জীবনের অন্যান্য ভূমিকার চেয়ে সবার আগে আল্লাহর বান্দী। তাই জীবনের সকল অবস্থা আমরা কিভাবে আল্লাহর গোলামির ভিতর কাটাতে পারি সেটিই আমাদের মূল লক্ষ্যবস্তু।
জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু হওয়ার পূর্বের এই সময়টুকু কিভাবে সর্বোত্তমভাবে অতিবাহিত করবেন সে সম্পর্কে কিছু পরামর্শ নিম্নে শেয়ার করা হলঃ
১) কুমারী নারীদের ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জীবনকে বিকাশিত করতে হবে
বিবাহিত বোনদের একটি সাধারণ অনুশোচনা হল তারা বিবাহের পরে তাদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান বা পেশাদার জীবনকে বিকাশিত করার মত পর্যাপ্ত সুযোগ পান না। সুতরাং, বিবাহ বন্ধনে প্রতিশ্রুতবদ্ধ হওয়ার পূর্বে ইসলামী শিক্ষার উন্নয়ন, ক্যারিয়ারের সর্বাধিক উন্নতি এবং সামাজিক অবদানের দিকে মনোনিবেশ করুন। বিয়ের আগে একটি ভাল ভিত্তি স্থাপনের পর যদি আপনি বিয়ের কারণে বিরতি নেন বা মা হন, তবে আল্লাহ তা’আলাই আপনাকে পূর্বের কাজে বা শিক্ষায় ফিরে আসতে সহায়তা করবেন।
২) সর্বোচ্চ যোগ্যতা দিয়ে আপনার পিতামাতাকে সেবা করুন
অনেক মা বা বোন যাদের বৃহত্তর পারিবারিক দায়িত্ব রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে প্রায়শই এরূপ ঘটে যে, তারা বিয়ের পরে তাদের পিতামাতার পুরোপুরি সেবা করতে সক্ষম হন না। আমরা অনেকেই জানি যে, পিতামাতার সেবা করার কত ফজিলত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না?” সাহাবীরা বললেন, “অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল!” তিনি বললেন, “আল্লাহর সাথে ইবাদতে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা এবং পিতামাতার অবাধ্য হওয়া।” (বুখারী)
তাই কুমারী নারীদের উচিত এখন পিতামাতার সেবায় মনোনিবেশ করা। কারণ, হতে পারে বিবাহের পর আমরা হয়ত তাদেরকে পরিপূর্ণরূপে সেবাদানের মত সময় ও সুযোগ পাব না। বিশেষত তারা যদি বয়ঃপ্রাপ্ত হন তবে তো তাদের জন্য আরও অধিক যত্ন ও মনোযোগের প্রয়োজন। আর এ কথা সর্বদা স্মরণ রাখুন, পিতামাতার সেবার মূল্য নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট থেকে পাওয়া যাবে।
৩) নতুন কোনো দক্ষতাকে বিকাশিত করুন
বিয়ের পরে, অনেক বোনই এটি অনুভব করেন যে, তারা নতুন দক্ষতা বিকাশের জন্য বা তাদের নিজস্ব আবেগ এবং প্রতিভাকে বিকাশিত করার মত পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। কাজের বাইরে যদি আপনার পর্যাপ্ত সময় থাকে তবে নতুন কোনো শখ শুরু করার এই মূল্যবান সুযোগটিকে মিস করবেন না। উদাহরণস্বরূপ হতে পারে, আপনি নতুন কোনো রান্না শিখছেন, নিজস্ব বিনিয়োগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করার কথা ভাবছেন অথবা একটি নতুন ভাষা শেখার চেষ্টা করছেন। একটি কথা সর্বদা মনে রাখবেন যে, বর্তমানের মতো সময় আপনি আর কখনও পাবেন না।
৪) কুমারী নারীদের বিয়ের বিষয়ে ব্যবহারিক পরামর্শ নিতে হবে
বর্তমান সমাজের একটি দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হল, বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা এবং দাম্পত্য জীবনে সমস্যার হার ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে। তাই বিবাহের পূর্ব থেকেই আপনার বৈবাহিক জীবনকে সুন্দর করতে অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ গ্রহণ করুন। এটা খুবই দুঃখের বিষয় যে, জীবনের
সকল ক্ষেত্রে পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেও বিবাহের ক্ষেত্রে পরামর্শ করতে কেন জানি আমরা লজ্জাবোধ করি। যার দরুণ সাংসারিক জীবনের অনেক বিষয়ই আমাদের অজানা থেকে যায়। যেগুলি থেকে পরবর্তীতে সাংসারিক জীবনে অশান্তির সৃষ্টি হয়।
তাই কুমারী নারীদের উচিত সুখী দাম্পত্য জীবন শুরু করতে বিবাহিত বোনদের সাথে আলোচনা করে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বিষয়গুলি তাদের কাছ থেকে শোনা। নিজের সুখী বৈবাহিক জীবন গঠনের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
৫) অন্যের জন্য আন্তরিকভাবে দু’আ করুন
মুসলমান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কেবল নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং অন্য ভাইবোনদের জন্য প্রার্থনা করতেও আমাদেরকে উত্সাহিত করা হয়েছে। যেমনটি আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“কোনো মুসলমান তাঁর ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দু’আ করলে সেই দু’আকে আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই কবুল করেন। প্রতিবার যখন সে তার ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে, তখন একজন ফেরেশতা তাঁর দু’আর উপর ‘আমীন বলে! এবং দু’আপ্রার্থীর জন্যও অনুরূপ মঙ্গলের ফয়সালা করা হয়।” (মুসলিম)
তাই নিজের জন্য দু’আ করার সময় দু’আর মধ্যে অপর মুসলমান ভাই-বোনদেরকেও শরীক করুন। এতে আল্লাহ আপনার জন্য মঙ্গলের ফয়সালা করবেন।