আমি কে? একবিংশ শতাব্দীর মুসলিম নারী

আমি কে? আমি একবিংশ শতাব্দীর মুসলিম নারী।
একবিংশ শতাব্দীতে একজন নারীর জন্য নিজের পরিচয় বুঝতে পারাটা আমি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে অন্যতম হিসেবে পেয়েছি। আমি কি একজন কর্তব্যপরায়ণ কন্যা, বোন, স্ত্রী বা মা হতে পেরেছি বা আরও সহজ কথায় সাফল্য এবং উচ্চতা অর্জনের সন্ধানে নারী হওয়া কি আমার জন্য কোনো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে?
নারী ও তার ইতিহাসঃ
কয়েক দশক ধরে আমি একটি বাস্তবতা বুঝতে পেরেছি যে, জীবনে চলার পথে নারীর জন্য ভারসাম্য বজায় রাখা তার জীবন-যাত্রারই অংশ।
সাইয়্যিদা জায়নাব(রাযিঃ) এর মতো মহিলা আমাদের ইতিহাসে উপস্থিতি না থাকলে এ বিষয়টি বোঝা আমাদের জন্য অনেক কঠিন হত।
তাঁর সম্পর্কে জানা, তাঁর কথাগুলি পড়া এবং তাঁর জীবনী বিস্তারিত ভাবে অধ্যয়ন করলে নারীদের সামনে একটি রোল মডেল উপস্থাপিত হবে।
কারবালার ঘটনায় জয়নাব(রাযিঃ) এর ভূমিকা আসলেই খুবই আশ্চর্যজনক।
যদিও প্রাশয়ই জুমার খুতবা বা অন্য কোথাও আমরা এগুলি শুনে থাকি।
কিন্তু তাঁর চরিত্রে কোমলতা ও কঠোরতার যে সংমিশ্রণ ঘটেছে তা খুবই বিরল।
ছোটবেলা থেকেই তার ঘটনাগুলি যতই শুনতাম ততই বিস্মিত হতাম।
জয়নাব(রাযিঃ)এর ভূমিকাঃ
আমি তাঁর শক্তি, সাহস ও ধৈর্যের কথা শুনেছি, তাঁর সময়ের স্বৈরশাসকের সামনে তাঁর নির্ভীকতার কথাও শুনেছি।
অপরদিকে, তিনি এতটাই পর্দাশীল ছিলেন যে, তার কন্ঠস্বরও বাহিরের কোনো পুরুষ শুনতে পেত না।
তিনি অত্যন্ত লজ্জাশীলা ছিলেন। কিন্তু কারবালার প্রান্তরে যখন তার ভাই ও নিকটাত্মীয়দেরকে হত্যা করা হয়েছিল আর তাঁকে তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে বন্দি করা হয়েছিল, তখন তিনি সাহসিকতার এক দুর্দান্ত নমুনা দেখিয়েছিলেন।
এসকল কারণে তাঁকে ‘দুঃখের মাতা’ বলা হত। তিনি পরিবারের ভিতর যেমন ছিলেন তাঁর বাবার শ্রেষ্ঠ মেয়ে, তেমনি ছিলেন তাঁর স্বামীর শ্রেষ্ঠ স্ত্রী, তেমনি ছিলেন তাঁর সন্তানাদির শ্রেষ্ঠ মা।
ইমাম সাজ্জাদ তাঁকে বলতেন, ‘আ’লিমা গাইরে মু’আল্লিমা’ অর্থাৎ, এমন কেউ যে কারও থেকে শিক্ষাগ্রহণ ব্যতীতই শিক্ষিত হয়েছে।
তাঁর জীবন এমন ছিল যে, যেকোনো মুসলিমা নারীকে অনুপ্রাণিত করতে একমাত্র তাঁর জীবন অধ্যয়নই যথেষ্ট।
আমি সত্যই এটি বিশ্বাস করি, কারণ জয়নাব(রাযিঃ) তাঁর জীবনকে আল্লাহর অনুগত বান্দী হওয়ার দিকেই মনোনিবেশ করেছিলেন।
তাঁর সন্তুষ্টি অন্বেষণেই তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল। তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাথে ইসলামের নির্দেশিত পদ্ধতিতে তিনি আচরণ করতেন।
তিনি এমন কাজ করে দেখিয়েছেন যা কোনো মহিলা কেন কোনো পুরুষের পক্ষেও তা অর্জন করা খুবই কঠিন।
সাইয়্যিদা জয়নাব(রাযিঃ) যে শুদ্ধ চিন্তাচেতনা অর্জন করেছিলেন তা এতটাই জটিল ও বৈচিত্র্যময় যে, কোনো নারীর জন্য তা এক অনন্য উদাহরণ হিসাবে বিদ্যমান থাকবে।
সাইয়্যিদা জয়নাব(রাযিঃ) প্রায়শই আল্লাহর প্রতি তাঁর সম্পূর্ণ নির্ভরতা ঘোষণা করতেন।
সিরিয়ায়, তিনি ইয়াজিদকে বলেছিলেন, “আমি আমার অভিযোগ কেবল আল্লাহর কাছেই প্রকাশ করি এবং তাঁর উপরেই আস্থা রাখি।” এই নিখুঁত বিশ্বাস তার প্রতিটি কথা ও কাজ প্রতিফলিত হত।
কেমন হবে আজকের নারী?
এ কথা গুলো বলার উদ্দেশ্য হল এটা বলা যে, প্রতিটা পুরুষ ও মহিলার ভূমিকা কেমন হবে ইসলামে তার পরিপূর্ণ দিকনের্দশনা আছে।
পুরুষ ও মহিলার সমাজে লিঙ্গ-ভিত্তিক আলাদা অবস্থান রয়েছে। তবে কারও ভূমিকাই অনস্বিকার্য নয় এবং কারও অধিকারই একচেটিয়া নয়।
আজকের দিনের মহিলারা ইসলামি জীবনব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে ব্যক্তিগত পছন্দের ভিত্তিতে জীবন বেছে নেওয়া বেশি পছন্দ করে।
যা স্বাভাবিক ভাবেই ইসলামের সাথে ব্যক্তিগত জীবনের দ্বন্দ্ব নির্দেশ করে।
কর্মের ক্ষেত্রে আমাদেরকে পুরোপুরি স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি, তবে আমাদেরকে ব্যক্তিগত পছন্দের ভিত্তিতে সহজ দিকটি বেছে নেওয়ার বিষয়েই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আজকাল প্রায় মহিলাই এরকম প্রশ্ন করে থাকে যে, ‘সন্তান ধারণের জন্য আমাকে আমার ক্যারিয়ার ছেড়ে দিতে হবে কেন?’
কিন্তু তারা এটি ভাবে না যে, আল্লাহ তাদেরকে পরবর্তী প্রজন্মকে দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছেন।
এই দায়িত্বের বন্টনের কথা চিন্তা করলেই একজনের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন হতে পারে।
অনেক প্রশ্ন করে, ‘আমাকে বিবাহ ও ক্যারিয়ারের মধ্যে কোনটি বেছে নিতে হবে?’
বা অনেকে প্রশ্ন করে, ‘আমি কি নিজেকে একা সফল হিসেব গড়ে তুলতে সময় দেব নাকি ভবিষ্যতের জন্য একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পরিবারকে সময় দেব?’
সবশেষে বলতে চাই এই পাঠটি আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যাতে আমরা নিজেকে জিজ্ঞাসা করি, আল্লাহ আমাদের জন্য কী চান এবং ইসলাম আমাদের কেন প্রয়োজন?
এরপর সমাজ বা আশপাশ আমাকে যেমন হিসেবেই দেখুক আমার একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা।
সেই সঙ্গে যেখানে আমার ব্যক্তিগত পছন্দ ও ইসলামের মধ্যে সংঘাত দেখা দেবে সেখানে ইসলামকে প্রাধান্য দেওয়া।