কোন ছ’টি ব্যবহার শিশুর সঙ্গে করবেন না

একটি ইমানদার মুসলমান পরিবারের শিশুসন্তান অবাধ্য হবে তা কখনোই কাম্য নয়। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই এটা হয়ে থাকে। অনেক পিতা মাতাই কারণ বুঝতে না পেরে সন্তানকে অহেতুক শাসন করেন। কিন্তু বুঝতে হবে ঠিক কী কারণে একটি শিশুর মধ্যে হয় ঘরকুনো মনোভাব, অথবা ঔদ্ধত্য, অথবা মিথ্যাভাষণ এসে থাকে। সেই নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে শিশুকে শিক্ষা দিলেই শিশু আদর্শ সন্তান হয়ে উঠবে।
নিম্নলিখিত ছ’টি কারণে শিশু অবাধ্য হয়ে ওঠে;
আদর্শ রোল মডেলের অভাবঃ
একটি শিশুর বড় হয়ে ওঠার সময় তার চোখের সামনে এমন মানুষ থাকা প্রয়োজন যার থেকে শিশু উচিত ব্যবহারগুলো শিখতে পারে। শিশু যদি দেখে তার সামনে কোনও গুরুজন মিথ্যা বলছে, কথা বানিয়ে বলছে, বা স্বয়ং শিশুকেই মিথ্যা বলছে তাহলে সেখান থেকে সে মিথ্যা বলা শিখবে। শিশুর যদি হাতটান স্বভাব থাকে, আর সেই স্বভাবকে শুরুতেই নিবারণ না করা হয় তাহলে শিশুর স্বভাব খারাপ হতে থাকে। মা যদি দেখেন যে বাজারের ফিরতি পয়সা ছেলে বা মেয়ে আর ফেরত দিচ্ছে না তখনই বিষয়টি কড়া ও যুক্তিপূর্ণভাবে দমন করা উচিত।
শিশু যদি দেখে যে বাবা যথেচ্ছ ধূমপান করছে তাহলে সেও একটা বয়সের পর ধরে নেবে যে ধূমপান করা দোষের কিছু নয়। তাই তখন তাকে নিষেধ করেও কোনও লাভ হবে না। বাংলায় একটি প্রবাদ রয়েছে, আপনি আচরি ধর্ম পররে শিখাও। সন্তানকে কোনও কিছু নিয়ে শিক্ষা দেওয়ার আগে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন আপনি নিজে সেই জিনিস থেকে বিরত থাকছেন কীনা।
অপমান ও অনর্থক শাসনঃ
সন্তানকে কখনও মারধোর করবেন না। জুতো দিয়ে মারা, লাথি মারা, থাপ্পড় কষানো, গালিগালাজ দেওয়া অবিলম্বে বন্ধ করুন। সন্তানকে অনর্থক দোষ দেওয়া বন্ধ করুন। এতে তার ব্যক্তিত্বের বিকাশে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। শিশু ভয় পেতে শেখে। ভয় থেকে মিথ্যা বলতে শেখে বা জেদ করতে শেখে। ছোটবেলা থেকে অপমানিত হতে হতে একসময় তার সেলফ ওয়ার্থ কমতে থাকে। সে একটি আদর্শ সুস্থ মানসিকতার মানুষ হয়ে উঠতে পারে না। তাই, শিশুর যদি কোনও ভুল দেখেন তাহলে প্রথমেই তাকে বোঝান। তার বন্ধু হয়ে উঠুন। শিশুর ব্যবহার ঠিক করতে পুরস্কার পদ্ধতি চালু করতে পারেন, কোনও ছোট কাজ সে যদি সফল ভাবে করে ফেলতে পারে তাহলে তাকে পুরস্কার দিন। এতে তার আত্মসম্মান বাড়বে। জেতার মানসিকতাও।
বাড়ির পরিবেশঃ
শিশুর বড় হয়ে ওঠার পিছনে বাড়ির পরিবেশ ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাড়ির পরিবেশ থেকেই শিশু ব্যবহার শেখে। সন্তান যদি দেখে বাবা ও মা ক্রমাগত ঝগড়া করে যাচ্ছে তাহলে সেও ঝগড়ুটে, অত্যাচারী বা ভীতু হয়ে ওঠে। বাবা যদি মায়ের গায়ে হাত তোলে , যদি বাবা মা অশান্তির জন্য আলাদা হয়ে যায় তাহলে তার প্রভাব ভয়ানকভাবে শিশুর উপর পড়ে। সেখান থেকেই শিশুর খারাপ ব্যবহার ও ভীতু হয়ে যাওয়া বা মানসিক সমস্যার সূচনা হয়। বাড়ির পরিবেশের দিকে নজর দেবেন সবসময়।
অত্যধিক নিষ্ঠুরতাঃ
কথায় বলা হয়, যা হয়না বচনে তা হয় পাঁচনে। পাঁচন অর্থাৎ অতিরিক্ত নিষ্ঠুর ব্যবহার বা শাস্তি দিয়ে বাবা মা ভাবেন সন্তান ঠিক পথে যাবে। আসলে উল্টো হয়। তাই অত্যধিক নিষ্ঠুরতা থেকে বিরত থাকাই ভাল।
অত্যধিক প্রশ্রয়ঃ
অত্যধিক নিষ্ঠুরতা যেমন ভাল নয়, সেরকম অতিরিক্ত প্রশ্রয় ভাল না। শিশু যদি না চাইতেই সব পেয়ে যায় তাহলে তার জেদ বা বায়না শুরু হয়। সে অর্জন করতে শেখে না। এটি তার ব্যক্তিত্ব বিকাশের পক্ষে ক্ষতিকারক।
কর্তৃত্বঃ
সন্তানের উপর সবসময় কর্তৃত্ব ফলাবেন না। তাকে নিজের মতো বাঁচতে দিন। নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিতে দিন। সবসময় প্রশ্ন করবেন না, নাক গলাবেন না তাদের জীবনে। তাহলেই দেখবেন আপনার ও আপনার সন্তানের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠবে। সন্তানের ব্যবহারও হবে মধুর।
আল্লাহ আমাদের অর্থাৎ মুসলমানদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন ইমানদার ও জিম্মেদার উম্মাতের জন্য। সন্তানকে আমরা তার যোগ্য করে যেতে পারি যেন এটাই লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।