কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে লাউয়ের রস

লাউ খেতে আপনারা অনেকেই ভালবাসেন। ভারতীয় উপমহাদেশ সহ এশিয়া আফ্রিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লাউ জনপ্রিয় সবজি। লাউগাছ ফলাতে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। উপরন্তু এতে থাকা পুষ্টিগুণের জন্য লাউকে অন্যতম স্বাস্থ্যকর সবজি বলে মনে করা হয়। লাউয়ের উপকারিতা বহুবিধ। লাউ গরমকালে শরীর ঠান্ডা করে। ফলে গরমের দেশগুলিতে শরীর ঠান্ডা করতে লাউ খাওয়া হয়। লাউ ওজন কমায়। স্ট্রেস, ডিপ্রেশন কমাতে, চুল ও ত্বককে ভাল রাখতে, কোলেস্টেরল কমাতেও লাউ সাহায্য করে থাকে। তবে অনেকেই জানেন না, লাউ কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষেত্রে অব্যর্থ টোটকা হিসেবে কাজ করে। আজকে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে লাউ কীভাবে সাহায্য করে, সেই নিয়ে আলোচনা করব।
পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সবজি লাউ!
লাউয়ের ইতিহাস অতি প্রাচীন। মজার ব্যাপার, প্রাচীনযুগে লাউকে মোটেও খাওয়ার জন্য চাষ করা হত না। বরং, লাউয়ের শক্ত মোটা খোলাকে জিনিসপত্র রাখার পাত্র হিসেবেই কাজে লাগাত মানুষ! তারপর তা খাদ্য হিসেবেও মানুষের কাছে পরিচিত হতে শুরু করে। লাউয়ের বিজ্ঞানসম্মত নাম ল্যাজেনারিয়া সাইসেরারিয়া। এটি একধরনের লতানে উদ্ভিদ।
লাউয়ের উপকারিতা
লাউয়ের প্রায় ৯৬% জল। এতে থাকা জল এবং খনিজ পদার্থ শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি, বি৬ এবং সি থাকে। এছাড়া লাউ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজের মতো উপকারী খনিজ পদার্থে ভরপুর। লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বর্তমান, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে লাউ
কোষ্ঠকাঠিন্যের জ্বালায় কষ্ট পান না, এমন মানুষ কিন্তু কমই রয়েছেন। বয়স হলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। অনেকসময় দেখা যায় একগাদা ওষুধ খেয়েও পেট কিছুতেই পরিষ্কার হতে চায় না। কমবয়সীরাও অনেকক্ষেত্রেই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। তাঁরা কিন্তু লাউকে দারুণভাবে কাজে লাগাতে পারেন। লাউ সহজলভ্য, এর দাম কম। কোষ্ঠকাঠিন্যের অনেক নামী-দামি ওষুধকে লাউ হেলায় হারাতে পারবে। আমরা সকলেই জানি খাবারে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। লাউয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং এর ৯৬% প্রায় জল।
লাউয়ে থাকা এই জল ও ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়েরিয়া সহ পেটের নানা সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে, লাউয়ের রস হজমক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং পরিপাক নালীকে পরিষ্কার রেখে সহজে মল নিঃসরণে সাহায্য করে। তবে এর জন্য লাউয়ের তরকারি বা ঘণ্ট খাওয়ার চেয়ে লাউয়ের রস খেলেই বেশি উপকার পাবেন। কারণ লাউয়ের মধ্যে থাকে ভিটামিন সি, যা রান্না করলে নষ্ট হয়ে যায়। সকালে উঠে আপনি নিয়ম করে একগ্লাস লাউয়ের রস খেতে পারেন। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি আপনাকে বাড়তি এনার্জির যোগান দেবে এবং আপনার শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থকে বের করে আপনাকে চাঙ্গা রাখবে।
লাউয়ের রস কীভাবে খাবেন?
লাউয়ের রস খাওয়ার অভ্যেস না থাকলে প্রথম-প্রথম একটু সমস্যা হতে পারে। তবে আস্তে-আস্তে একে অভ্যেস করে ফেলুন। সাধারণত লাউয়ের রসের সঙ্গে অন্য কোনও সবজির রস না মেশানোই বাঞ্ছনীয়, এবং বানানোর পর একে বেশিক্ষণ ফেলে না রেখে টাটকা পান করুন। দরকার হলে আমলা, আদা, তাজা পুদিনাপাতা, সৈন্ধব লবণ ইত্যাদি তার সঙ্গে যোগ করতে পারেন।
উপকরণ
প্রয়োজন মতো লাউ, ১ চামচ জিরা, ১০-১২ টা পুদিনাপাতা, ২ চামচ পাতিলেবুর রস, সৈন্ধব লবণ পরিমাণ মতো, পরিমাণ মতো পানি। ইচ্ছে হলে একটুকরো আদা যোগ করতে পারেন।
কীভাবে বানাবেন?
ব্লেন্ডারে লাউ, আদা, পুদিনাপাতা, এবং জিরা একসঙ্গে নিয়ে ভাল করে ব্লেন্ড করে নিন। এবার ওতে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে আবার ব্লেন্ড করে নিন। তারপর ওই মিশ্রণের মধ্যে পাতিলেবুর রস এবং সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে নিয়ে ছেঁকে নিলেই তৈরি আপনার লাউয়ের রস।
এবার থেকে রোজ সকালে উঠেই একগ্লাস টাটকা লাউয়ের রস খাওয়ার অভ্যেস করুন। দেখবেন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাবেন।