খাদ্যসংকট দূরীকরণে ইসলামী শিক্ষার ভূমিকা

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, সমগ্র বিশ্বে ৮২ কোটির বেশি মানুষ খাদ্যসংকট সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগে।
খাদ্যসংকট, তার কারণ একাধিক এবং এটিকে নির্মূল করার জন্য অনেকগুলি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নিতে হবে।
কুরআন-হাদিসের আলোকে খাদ্যসংকট সমস্যার সমাধানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো-
স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য একটি মূল্যবান নিয়ামত, খাদ্যসংকট তাতে বাধা দেয়
ইসলাম স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেয়। এখানে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলঃ
১)আল্লাহ তা’আলা কুরাইশদেরকে যে অনুগ্রহ দান করেছিলেন সেগুলির মধ্যে উল্লেখ করেছেনঃ
“অতএব তারা যেন এবাদত করে এই ঘরের পালনকর্তার। যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং যুদ্ধভীতি থেকে তাদেরকে নিরাপদ রেখেছেন” (সূরা কুরাইশ:আয়াত ৩-৪)
২)রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“সকালবেলায় রিজিকের অন্বেষণ করো! কেননা সকালবেলা বরকতময় ও সফলতা অর্জনের জন্য উপযুক্ত সময়” (ইবনে মাজাহ)
উত্পাদনশীল কাজের প্রতি উৎসাহ প্রদান খাদ্য সংকটের সমস্যা দূর করে
উত্পাদনশীল কাজ এমন একটি কর্তব্য যেটিতে প্রত্যেকের জড়িত হওয়া উচিত।
অলসতা বা অন্যের উপর নির্ভরশীলতার কোনো স্থান ইসলামে নেই।
জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রত্যেকের জন্য ফরজ এবং এটি ইসলামের দৃষ্টিতে অনেক প্রশংনীয়।
৩)আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও” (সূরা জুমুআহ:আয়াত-১০)
৪)আল্লাহ আরও বলেনঃ
“তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে সুগম করেছেন, অতএব, তোমরা তাতে বিচরণ কর এবং তাঁর দেয়া রিযিক আহার কর। তাঁরই কাছে তোমরা পুনরুজ্জীবিত হবে” (সূরা মুলক:আয়াত ১৫)
ইসলাম কীভাবে ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করে
৫)কা’ব ইবনে উজরা (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট দিয়ে গেল। সাহাবাগণ তাঁর শক্তি-সামর্থ্য দেখে বলতে লাগলেন, “সে যদি আল্লাহর রাস্তায় এই শক্তি ব্যবহার করত”
তাদের কথা শুনে নবীজী বললেন, “সে যদি তাঁর ছোট বাচ্চাদের জন্য খাবার সংগ্রহ করতে বের হয় তবে সে আল্লাহর রাস্তায় আছে; সে যদি তাঁর বৃদ্ধ পিতামাতার জন্য উপার্জন করতে বের হয় তবে সে আল্লাহর রাস্তায় আছে; এবং সে যদি নিজেকে মন্দকাজ থেকে বিরত রাখতে বের হয় তবেও সে আল্লাহর রাস্তায় আছে। কিন্তু সে যদি নিজের শক্তির উপর গর্ব করার জন্য বের হয় তবে সে শয়তানের রাস্তায় আছে”
সেরা খাবার! খাদ্যসংকট থেকে রক্ষা
৬)মিকদাম (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“নিজের হাতে কাজ করে মানুষ যা উপার্জন করে তার চেয়ে উত্তম খাবার আর কেউ খায় নি। আল্লাহর নবী দাউদ আ’লাইহিস সালাম নিজ হাতে উপার্জন করতেন” (বুখারী)
৭)আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেনঃ
“তোমাদের মধ্যে কারও জন্য মানুষের নিকট হাত পাতার চেয়ে নিজে আত্মনির্ভরশীল হয়ে বনে কাঠ কেটে সেই কাঠ বাজারে বিক্রি করা ভালো। জেনে রাখো, উপরের হাত নীচের হাতের চেয়ে উত্তম” (মুসলিম)
কাজ করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখা
৮)ওমর (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“তোমারা যদি আল্লাহর উপর যথাযথভাবে ভরসা করতে, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ঐ পাখিদের মত রিযিক দিতেন যারা খালি পেটে সকালে নীড় থেক বের হয় আর সন্ধ্যায় ভরা পেটে তাদের নীড়ে ফিরে আসে” (ইবনে মাজাহ)
স্পষ্টতই, হাদিসটি ইঙ্গিত করে, আল্লাহর উপর ভরসা রাখার পাশাপাশি কাজের প্রয়োজনীয়তা আছে। কারণ পাখিরা তাদের নীড়ে আল্লাহর ফয়সালা আসার অপেক্ষায় বসে থাকে না।
শ্রমিকদের অধিকার
৯)আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আল্লাহ বলেন, “কিয়ামতের দিন আমি তিন শ্রেণীর মানুষের প্রতিপক্ষ হবঃ
যে আমার নামে অঙ্গীকার করে, কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করে;
যে কোনো মুক্ত মানুষকে বিক্রি করে দেয় এবং তার মূল্য ভক্ষণ করে;
এবং যে শ্রমিক নিযুক্ত করে এবং তার কাছ থেকে সম্পূর্ণ কাজ নেয় তবে তার শ্রমের বিনিময়ে তাকে অর্থ প্রদান করে না।”(বুখারী)
১০)আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“…খাও ও পান কর এবং অপচয় করো না। তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না” (সূরা আ’রাফ:আয়াত-৩১)
১১)আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“নিশ্চয় অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ” (সূরা ইসরা:আয়াত-২৭)
১২)মিকদাম (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“মানুষ তার পেটের চেয়ে খারাপ কোনো পাত্র ভরাট করে না। মাজা সোজা রাখার মত খাবারই যথেষ্ট। যদি প্রয়োজনই হয় তবে খাবারের জন্য এক-তৃতীয়াংশ, পানীয়ের জন্য এক-তৃতীয়াংশ, এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফাঁকা রাখা উচিত” (তিরমীযী)