খেজুর বৃক্ষের মত হোন: ইসলামী গুণাগুণ নিজের মধ্যে বিকশিত করুন

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “গাছপালার মধ্যে এমন একটি গাছ আছে, যার পাতা ঝরে পড়ে না এবং তা হল মুমিনের দৃষ্টান্ত। তোমরা আমাকে বলতে পারো, সেটা কোন গাছ?” অতঃপর লোকজনের খেয়াল জঙ্গলের গাছ পালার প্রতি গেল। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাযিঃ) বলেন, “আমার মনে হতে লাগল যে, তা হল খেজুর গাছ। কিন্তু আমি লজ্জাবোধ করলাম।” সাহাবায়ে কেরাম বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল! আপনিই আমাদের তা বলে দিন।” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তা হল খেজুর গাছ।” আবদুল্লাহ (রাযিঃ) বলেন, “তারপর আমি আমার পিতাকে আমার মনে যা এসেছিল তা বললাম। তিনি বললেন, তুমি যদি তখন তা বলে দিতে যে, উহা হল খেজুর গাছ, তবে অমুক অমুক জিনিস লাভ করার চাইতেও আমার কাছে অধিক প্রিয় হত।” (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীগণকে বললেন, “এমন একটি গাছ আছে, যার দৃষ্টান্ত মুনিনের ন্যায়, এ গাছটি কি গাছ তোমরা কি আমাকে বলতে পার?” তখন লোকেরা জঙ্গলের গাছসমূহের থেকে একটি গাছের কথা উল্লেখ করল। ইবনে উমর (রাযিঃ) বলেন, “আমার মনে হতে লাগল, তা হল খেজুর গাছ। তখন আমি বলার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু তথায় যেহেতু সমাজের বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিগণও ছিলেন, তাই আমি কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলাম।” লোকজন চুপ হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তা হল খেজুর গাছ।” (মুসলিম)
হাদিসের বর্ণনায় খেজুর গাছের উপমা
এই হাদিসের বর্ণনায় একটি উপমা রয়েছে যা আমাদের খেজুর গাছের চরিত্র এবং বৈশিষ্ট্যগুলি খতিয়ে দেখার উৎসাহ দেয়, যাতে আমরা এই গুণগুলি আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি। ইসলাম আমাদেরকে জ্ঞান অন্বেষণ করতে উত্সাহ দেয় এবং এই হাদিসটি আমাদেরকে বৃদ্ধ বা যুবক যে বয়সেরই হোক না কেন জ্ঞান অন্বেষণে অনুপ্রাণিত করে। জ্ঞান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি উপহার এবং কেবল আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। যেমন এখানে ইবনে উমর (রাযিঃ) বয়সে সবার থেকে ছোট হয়েও বিষয়টি ধরতে পেরেছিলেন।
হাদীসটিতে আমাদের জন্য অনেক চিন্তার খোরাক রয়েছে। একটি বিষয় হল, ইসলাম আমাদেরকে জ্ঞান অন্বেষণ করতে উত্সাহিত করে এবং যখন কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় তখন উত্তর জানা থাকলে সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত।
আসুন এই হাদিসটি কিছুটা ব্যাখ্যা করা যাক এবং এখানে আমাদেরকে কি বোঝানো হয়েছে সেটি উপলব্ধি করা যাক।
খেজুর গাছ এবং মুমিনের মধ্যে সম্পর্ক কী?
প্রথমত, খেজুর গাছ ধীরে ধীরে বড় হয়। ফল ধরতে শুরু করার আগে এটি ৪-৮ বছর পর্যন্ত সময় নিতে পারে। খেজুর গাছের শিকড়গুলি শক্তিশালী এবং হতেও কয়েক বছর সয় লাগে। অনুরূপভাবে একজন মুসলিম একদিনেই দ্বীনের সমস্ত জ্ঞান অর্জন করে ঈমানকে পরিপূর্ন করে ফেলতে পারে না। ইলম অর্জনের পথে তাঁকে পাড়ি দিতে হয় সুদীর্ঘ পথ। এরপর তাঁর ইসলামী জ্ঞান পরিপূর্ণ হয়, ঈমানও পরিপূর্ন হয়।
দ্বিতীয়ত, খেজুর গাছ জন্মাতে আলাদা জায়গা বা এর জন্য খুব বেশি পরিচর্যারও প্রয়োজন হয় না। এটি যেখানে সেখানে জন্মাতে পারে। এটি নিজের মত করে নিজেকে গড়ে তোলে। অনুরূপভাবে একজন মুমিনকেও সামাজিক কুপ্রথার বিপরীতে চলে নিজেকে নিজের মত করে গড়ে নিতে হয়। সমাজ বা পরিবার অনেকক্ষেত্রে তাঁর পরিচর্যা না করলেও তাঁকে নিজের মত করেই নিজেকে গড়ে নিতে হয়।
তৃতীয়ত, খেজুর গাছ অনেক কঠিন জলবায়ু ও আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে বড় হয়। মরুভূমির তীব্র গরম ও মরুঝড়ের মধ্য দিয়েই তাঁকে টিকে থাকতে হয়। এত ঝড়-ঝাপটার মধ্যেও তার কান্ড হয় অনেক শক্ত। এতকিছুর পরেও সে সুমিষ্ট ফল দান করে। মানুষকে ছায়া দান করে। অনুরূপভাবে একজন মুমিনের জীবনেও অনেক বাধা বিপত্তি আসবে। তাঁকে সঠিক পথ থেকে সরিয়ে দিতে অনেক প্রলোভন আসবে। অনেক কাছের মানূষ হয়ত তাঁকে কষ্ট দেবে। কিন্তু এরকিছুর পরেও সে নিজে তো ভেঙে পড়বেই না, বরং সে সবর করে ঈমানের পথে আরও দৃঢ় হবে। আর মানুষের কল্যাণে সদা সর্বদা নিয়োজিত থাকবে।
ইনশাআল্লাহ এই নিবন্ধটি আমাদেরকে এই হাদীসটি প্রকৃত অর্থ বুঝতে, বাস্তব জীবনে তা প্রতিফলন ঘটাতে এবং আমাদের চারপাশের সকলের মন ও চেতনা বিকাশে কিছুটা হলেও উপকারী হতে সাহায্য করবে।