জাকাত সম্পদের সাম্য ও দারিদ্র বিমোচনে সাহায্য় করে

ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রীতিনীতি গুলির মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হলো জাকাত প্রথা। এই নিয়মের আওতায় প্রত্যেক মানুষ আসে, এদের মধ্যে কিছু জাকাত দাতা ও বেশ কিছু গ্রহীতা। একে সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করতে গেলে বলতে হবে যে, এটি আল্লাহতাআলা নির্ধারিত ফরজ যেখানে ধনীরা তাদের সম্পদের একটা অংশ গরীব, দুঃস্থ, অনাহারীদের দান করে দেন। এর ফলে সমাজে অর্থবৈষম্যও দেখা যায় না আবার ধনীর সম্পদে আল্লাহের রহমতে অসীম থাকে।
জাকাত কী ও তার উদ্দেশ্য কী?
এর প্রধান উদ্দেশ্য যাদের অর্থের প্রয়োজন, খাদ্যের প্রয়োজন তারা যেন তা পর্যাপ্ত পরিমাণে পায়। এর দ্বারাই আজকের গ্রহীতারা আগামীর দাতায় পরিণত হবে। সম্পদের এই চক্রাকার আবর্তন অর্থনীতিকেও চাঙ্গা রাখে। ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তির একটি হলো জাকাত। এটি কোনো ভাবেই বর্জনীয় নয় উপরন্তু এর গুরুত্ব নামাজের সমান। আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, তারাই জান্নাতের প্রধান হকদার হবে যারা আল্লাহের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে এবং নিজের সম্পদকে অন্যের সাহায্যে ব্যবহার করেছে।
যারা ধনী, যাদের সামর্থ্য আছে জাকাত দান করার তারা যদি তা না করে তাহলে তাদের ভয়াবহ শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। রসুল (সা:) বর্ণনা করছেন এক বিশাল বিষধর অজগর সাপের, যা কায়ামতের দিনে সেই সমস্ত মানুষদের গলায় পেঁচিয়ে যাবে যারা জাকাত প্রদান করেনি। সেই সাপ তাদের কামড়াতে কামড়াতে বলবে, আমিই তোমার সম্পদ, তোমার জমিয়ে রাখা ধনরাশি।
আল্লাহতায়ালা স্বয়ং সমস্ত ধনসম্পদের মালিক আমরা কেবল তাঁর আজ্ঞাবহ বান্দা। তাঁর সম্পদের প্রতিনিধিত্ব করা ছাড়া আর কিছুই আমাদের ক্ষমতায় নেই। তাই কোনো আত্মভরি ব্যক্তি যদি জাকাত দিতে অসম্মত হয় তাহলে আল্লাহতায়ালা তাদের সম্পদ কেড়ে নিয়ে চরমতম দুর্ভিক্ষে নিক্ষেপ করবেন।
কারা দেবে ও কারা নেবে?
এখন প্রশ্ন ওঠে কারা দেবে এবং কারা নেবে। এর উত্তরে আল্লাহতায়ালা সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়েছেন। যারা বার্ষিক বাড়তি আয় ৮৬ গ্রাম সোনার মূল্যের সমান বা অধিক তারা জাকাত দিতে সম্মত। সেই সম্পদকে শতকরা হিসাবে আড়াই টাকা হিসাবে ধরলে জাকাতের পরিমাণ বেড়িয়ে আসে।
এই জাকাতের হিসেব থেকে আপনাকে প্রয়োজনীয় সামগ্রীকে বাদ দিতে হবে। প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মধ্যে আসে খাদ্য, বাড়ি, গাড়ি, বস্ত্র, যন্ত্রপাতি, ব্যক্তিগত খরচ, কৃষিকাজের খরচ, বইপত্র ইত্যাদি। এই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুলি ছাড়া যে সম্পদ আপনার গচ্ছিত আছে তা জাকাতের আওতাভুক্ত।
যারা দাবিদার তাদের প্রত্যেকেই আর্থিক দৈন্যদশা বা আকস্মিক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এদের মধ্যে আসে ফকির, মিসকিন, ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি, মুসাফির ইত্যাদিদের জন্য।
বেশ কিছু সম্পর্কের মধ্যে দেওয়া নিষেধ। পিতামাতা-সন্তানের মধ্যে জাকাত দেওয়া বারণ কারণ আর্থিক দুর্দশার শিকার হলে এরা পরস্পরের উপর দায়বদ্ধ। এছাড়াও ধনী লোকেদের জাকাত দেওয়া বারণ, এবং রাসূল (সা:) এর বংশধরদের জাকাত দেওয়া বারণ।
আপনি চাইলে অবশ্যই আপনার আত্মীয়দের জাকাত দিতে পারেন যারা অর্থকষ্টে ভুগছে। তবে এদের জানানোর দরকার নেই যে আপনি তাদের দিচ্ছেন কারণ আত্মসম্মানী মানুষরা এতে অপমানিত বোধ করেন।
এটি সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচনে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। আমাদের সবার এই ব্যবস্থাকে মেনে চলা উচিত।