জুম’আর দিনে আমরা যেসকল ভুল করে থাকি

জুম’আর সালাত প্রতিটি মুসলমানের জন্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। জুম’আর দিনে অনান্য ইবাদাতের জন্যও রয়েছে অতিরিক্ত সওয়াবের ওয়াদা। তাই এই দিনটিকে যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্যই জরুরি।
এছাড়া সপ্তাহের মধ্যে শুক্রবার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ একটি দিন। প্রতিটি মুসলিমের কাছেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জুম’আর দিনটি। সাপ্তাহিক ঈদ হিসেবে এই দিনের ফজিলতও অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি। এই দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হচ্ছে সঠিকভাবে জুম’আর সালাত আদায় করা। মোটামুটি বেশিরভাগ মুসলমান জুম’আর সালাতে শরীক হলেও গুরুত্বপূর্ণ এই সালাতের সময় আমদের অনেকেরই কিছু ভুল হয়ে যায়। সেরকম কিছু ভুলত্রুটি নিয়েই আজকের নিবন্ধের সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
পুরোপুরি পরিচ্ছন্ন না হয়ে জুম’আর দিনে সালাতে গমন
জুম’আর সালাতে যাওয়ার আগে গোসল করা জরুরি। অনেকেই এই দিনে এত বেশি ব্যস্ত থাকেন যে, কোনো রকম জুম’আর ফরজ দুই রাকাত সালাত আদায় করেই চলে আসেন। অথচ আবু সাঈদ খুদরি (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জুম’আর দিন প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য গোসল করা জরুরি। আর জুম’আর দিনে সকলে মিসওয়াক করবে এবং সম্ভব হলে সুগন্ধি ব্যবহার করবে।” (বুখারি, মুসলিম)
তাই আমাদের সকলেরই উচিত শত ব্যস্ততা থাকলেও জুম’আর দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা, এবং যদি সামর্থ্য থাকে তবে সুগন্ধি ব্যবহার করা। এছাড়া এদিনে উত্তম ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে মসজিদে যাওয়াও সুন্নত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও জুম’আর সালাত আদায়ের জন্য তার পোশাকের মধ্যে উত্তম ও পরিচ্ছন্ন পোশাকটি পরিধান করতেন।
জুম’আর দিনে মসজিদে দেরি করে যাওয়া
জুম’আর সালাতে কেবল দুই রাকাত ফরজ সালাত আদায় করাই যথেষ্ট নয়। জুম’আর খুতবা শোনাও ওয়াজিব। রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুম’আর দিন জানাবাত গোসল (ফরজ গোসল)-এর ন্যায় গোসল করে এবং সালাত আদায়ের জন্য সর্বপ্রথম আগমন করে, সে যেন একটি উট কোরবানি করে। আর যে ব্যক্তি এভাবে দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে, সে যেন একটি দরু কোরবানি করে। আর এভাবে তৃতীয় পর্যায়ে যে ব্যক্তি আগমন করে, সে যেন একটি শিং-বিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করে। চতুর্থ পর্যায়ে এভাবে যে আগমন করে, সে যেন একটি মুরগি আল্লাহর রাস্তায় সদকা করে। আর পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করে, সে যেন একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় সদকা করে।” (বুখারি)
তাই জুম’আর সালাতের জন্য আজানের পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। তাহলে সময়মত ও সঠিকভাবে সালাত আদায় সম্ভব এবং উপরোক্ত সওয়াবের ভাগিদার হওয়াও সম্ভব।
জুম’আর আজানের পর সময় অন্য কাজে ব্যস্ত থাকা
জুম’আর সালাতের জন্য আজান হয়ে গেলে সে সময় অন্য কাজে মশগুল থাকা নিষিদ্ধ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদের দিকে যাওয়া জরুরি। জুম’আর প্রথম আজান শোনার সাথে সাথেই ব্যবসায় কিংবা অন্য কাজ বন্ধ করে দেওয়া অথবা সালাতের জন্য বিরতি দেওয়া উচিত। আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, “(রাসূলের জামানায়) লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করতেন। যখন তারা দুপুরের পরে জুম’আর জন্য যেতেন, তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাদের বলা হলো, যদি তোমরা গোসল করে নিতে তবে ভাল হতো…।” (বুখারি, মুসলিম)
খুতবার সময় কথা বলা
জুম’আর সালাত যেমন ফরজ, তেমনি জুম’আর খুতবা শোনাও ওয়াজিব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবার সময় কথা বলতে কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জুম’আর দিন ইমাম খুতবা দিচ্ছেন এমন অবস্থায় যখন তোমার পাশের মুসল্লিকে চুপ করার জন্য ‘চুপ থাকো’ এটুকু বললে, তা হলে তুমি এ কথাটাও অনর্থক বললে।” (বুখারি, মুসলিম)
সুতরাং, খুতবার সময় নিজে কথা বলা যেমন নিষিদ্ধ তেমনি কেউ কথা বললে তাকে চুপ করতে বলাও উচিত নয়। অর্থাৎ খুতবার সময় নিজের জবানকে পুরোপুরি বন্ধ রাখা চাই।
মনোযোগ দিয়ে জুম’আর খুতবা না শোনা
মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করা জুম’আর সালাতেরই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। তাই মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনাতাও জরুরি। তবে মুসল্লি বেশি হওয়ার কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে খুতবার আওয়াজ যদি কারও পর্যন্ত না পৌঁছে, তবুও নিরব থাকাটাই নিয়ম।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি উত্তমভাবে অযু করে জুম’আর সালাত আদায়ের জন্য আসে, নীরবে ও মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করে, তাঁর জন্য পরবর্তী জুম’আ পর্যন্ত এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (খুতবা চলাকালীন) কঙ্কর স্পর্শ করলো (অর্থাৎ, অযথা কাজ করল), সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যাত একটি কাজ করল।” (মুসলিম)
আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে এই ভুলগুলি থেকে বেঁচে সঠিকভাবে জুম’আর সালাত আদায়ের তৌফিক দান করুন। আমীন।