ডঃ রানা দাজানি: নারীশিক্ষায় ব্রতী জর্ডনের বিজ্ঞানী

বিজ্ঞান, ইসলাম এবং মানবাধিকারের আশ্চর্য সংমিশ্রণ হলেন ডঃ রানা দাজানি। জর্ডনের বাসিন্দা ডঃ দাজানি তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বহুক্ষেত্রে। বিজ্ঞান ও শিক্ষকতার বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের নারী ও শিশুদের শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন তিনি।
ডঃ রানা দাজানির জীবনঃ
ডঃ রানা দাজানি জর্ডানের হাশিমেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যা ও বায়োটেকনলজি বিষয়ের অধ্যাপিকা। আমেরিকায় ডক্টরেট করার জন্য ফুল ব্রাইট স্কলারশিপ পেয়েছিলেন তিনি।
মূলত তিনি সারকেশিয়ান ও চেচেন বংশের জিনগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করেছেন। এছাড়া তাঁর স্টেম সেল সংক্রান্ত গবেষণা ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর পান্ডিত্যের বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম হলো মানবজাতির জৈবিক বিবর্তন এবং তার ইসলামিক ব্যাখ্যা। বিশ্বজুড়ে সমস্ত ইসলামিক বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলিতে তাঁর তত্ত্ব বিশেষভবে গ্রহণযোগ্য।
চার সন্তানের মা ডঃ রানা দাজানি মানুষটিকে একরকম সমাজ সংস্কারকও বলা যেতে পারে। তাঁর পিতা ছিলেন প্যালেস্তাইন থেকে। মা সিরিয়ার।
ডঃ দাজানি নিজে জর্ডনের পাসপোর্টধারী। আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করার পর তিনি জর্ডানে ফিরে সেখানকার ছেলেমেয়েদের বই পড়ার প্রতি আকর্ষিত করার উদ্যোগ নেন।
এর মূল কারণ ডঃ দাজানি নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকায় বিপুল সংখ্যক গ্রন্থাগার রয়েছে।
পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী যে কেউ সাধারণ পাঠাগারগুলিতে গিয়ে জ্ঞান অন্বেষণ করতে পারেন। জর্ডন সেরকম গ্রন্থাগার নেই।
ছেলে মেয়েরা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হবে কেমনভাবে। যাই হোক শুরু হয় ‘উই লাভ রিডিং‘ নামক একটি কার্যক্রম।
ডঃ রানা দাজানির ‘উই লাভ রিডিং’ কার্যক্রমঃ
এর মাধ্যমে প্রথমে স্থানীয় মসজিদে ছোট ছেলে মেয়েদের উচ্চস্বরে পড়ানোর কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে ডানা বিস্তার আজ তাঁর সংগঠন বিশ্বের ৫৫টি দেশে শিশুদের পড়তে শেখাচ্ছে। এই শিশুদের একটা বড় অংশ কন্যা সন্তান। বহু দেশের শতাব্দি প্রাচীন কুসংস্কার ভেঙে নারীশিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাঁর এই প্রচেষ্টাকে সারা বিশ্ব কুর্নিশ জানিয়েছে।
২০১০ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত শুধু মাত্র জর্ডানে ৭০০০ মহিলাকে উচ্চস্বরে পড়তে শিখিয়েছে ডঃ দাজানির সংস্থা।
এর পাশাপাশি জর্ডানে প্রায় ১৫০০ লাইব্রেরি তৈরি করেছে “উই লাভ রিডিং” । তাঁর কথায়, জর্ডান স্কুল কলেজ সবই রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তক এবং ধর্মীয় গ্রন্থ পড়ছে। কিন্তু উপভোগ করছে না।
ছোটরা বই কে ভালোবাসলে, উপভোগের মাধ্যম মানলে তবে পড়ার প্রতি আগ্রহী হবে এবং বই পড়া অভ্যেসে পরিণত হবে।
কর্মজীবন ও বিজ্ঞানচর্চাঃ
ডঃ দাজানি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে। এর পরের পাঁচ বছর আমান অ্যাকাডেমিতে শিক্ষকতা করেন তিনি।
একাধিক প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করে ডঃ দাজানি খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক শিক্ষাক্ষেত্রে একজন সুপরিচিত মুখ হয়ে দাঁড়ান।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস বিভাগে অধ্যাপনা করার পর তিনি বর্তমানে রিচমন্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপিকার কাজ করেন।
এছাড়া তরুণ মুসলিম বৈজ্ঞানিকদের জন্য একটি সংস্থাও তৈরি করেন ডঃ দাজানি। এছাড়া তিনি দীর্ঘ সময় সাংবাদিককতার সাথেও যুক্ত।
ফ্রন্টিয়ার পত্রিকার ইমিউনোলজি বিভাগের এবং Muslime-Science.Com-এর সম্পাদক তিনি।
অ্যারাবিয়ান বিজনেস পত্রিকা তাঁকে ১০০ জন প্রভাবশালী আরব মহিলা–দের তালিকায় ত্রয়োদশ স্থান দিয়েছে। এই মুসলিম অধ্যাপিকা এবং শিক্ষাবিদ মধ্যপ্রাচ্য তথা সমগ্র পৃথিবীর সামনে একজন আইকন হয়ে উঠেছেন। তাঁর কাজ, তাঁর মতাদর্শ এবং দৃষ্টিভঙ্গি আজকের পৃথিবীর জন্য উপযুক্ত।