তাওবা করুন, তার ইতিবাচক প্রভাব জানুন

আমরা প্রতিদিন অনেক কাজ করে থাকি। এর মধ্যে ভাল যেমন আছে তেমনি মন্দ কাজও আছে। রাতে কোনো এক সময়ে নির্জনে একাকী হয়ে দেখে নেই প্রতিদিনের কাজগুলো। খারাপ কাজগুলোর জন্য নিজের ভেতরে একধরনের অনুশোচনা আসে। আল্লাহর কাছে এই অনুশোচনা প্রিয়। ইমাম গাজ্জালী (র.) তার ‘ইয়াহ্ইয়াউল উলুমুদ্দীন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, সৃষ্টিজগৎ পাপ-পুণ্যের তিনটি স্তর রয়েছে- ক. কোনো সময়েই কোনো পাপ না করা। এটা ফেরেশতা বা পয়গাম্বরগণের বৈশিষ্ট্য; খ. অব্যাহতভাবে গুনাহ করা এবং সে জন্য কোনো অনুতাপ, অনুশোচনা না করা এবং তা ত্যাগ করার কথাও চিন্তা না করা। এটা শয়তানের বৈশিষ্ট্য; এবং গ. কোনোরকম গুনাহ হয়ে গেলে অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে গুনাহ না করার জন্য দৃঢ় সংকল্প করা। এটা মানবজাতির বৈশিষ্ট্য। এরই নাম তাওবা।
তাওবা করার কথা কী বলা রয়েছে হাদিসে?
বঞ্চিত, অবহেলিত বা অধঃপতিত মানুষ যদি কোরআনের মর্মবাণীকে অনুধাবন করতে পারে, অনুসরণ করতে পারে, তাহলে সেও পরিণত হবে যথার্থ মানুষে, সফল মানুষে, আলোকিত মানুষে। ‘তবে যে অনুশোচনা করে, বিশ্বাস করে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে চলে তার প্রতি আমি সবসময়ই ক্ষমাশীল।’ (৮২)। ‘আল্লাহ (প্রার্থণা কবুল করে) বললেন, ওদের কৃতকর্মের জন্যে ওরাই অনুশোচনা করবে।’ (সূরা মুমিনুন ৪০)
প্রকৃতপক্ষে আমরা যত প্রাণবন্তভাবে আমাদের অনুশোচনাগুলোকে শক্তির উৎসে পরিণত করতে পারবো, আমাদের জীবন ততোই গঠনমূলক ও সমৃদ্ধ হবে। রাসূল (সা.) এর একটি হাদীসে বলা হয়েছে, “মুমিনের জন্য কতইনা বিস্ময়কর, তার জন্য সমস্ত কিছুতেই কল্যাণ রাখা হয়েছে।
যখন তার আনন্দের কিছু ঘটে, তখন সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে এবং এটি তার জন্য উত্তম হয়। আবার তার জন্য যদি মন্দ কিছু হয়, তবে সে ধৈর্য্যধারণ করে এবং এটিও তার জন্য উত্তম হয়।”
এটিই মূলত নিজেকে পুনঃগঠনের প্রক্রিয়া। যখনই আপনাকে কোনো অনুশোচনা আচ্ছন্ন করবে, আপনি তখন ধৈর্য্যধারণ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবেন। আপনার অনুশোচনার জন্য অধিক চিন্তা না করে আপনি আপনার কাজ নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হন।
আপনার অতীতের করা ত্রুটির জন্য চিন্তা করুন কি উপায়ে আপনি এর ক্ষতিপূরণ করতে পারেন। যদি আপনি বড় কিছু করতে না পারেন, তবে আপনার সা্ধ্যানুযায়ী ক্ষুদ্র কিছুই করুন। এটি বরং আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং ভবিষ্যতে আপনার সাফল্যকে নিশ্চিত করবে। চিন্তাসর্বস্বতার পরিবর্তে বাস্তবেই প্রয়োগযোগ্য কৌশল সম্পর্কে আপনার চিন্তা করা প্রয়োজন।
গোনাহ ও তাওবাঃ
গোনাহ করার পর তাওবার অর্থ হচ্ছে এই যে, যে দাসটি তার প্রভুর নাফরমান ও অবাধ্য হয়ে প্রভুর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল সে এখন নিজের কার্যকলাপে অনুতপ্ত। সে প্রভুর আনুগত্য করার ও তাঁর হুকুম মেনে চলার জন্য ফিরে এসেছে।
আর আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার দিকে তাওবা করার মানে হচ্ছে এই যে, দাসের ওপর থেকে প্রভুর যে অনুগ্রহ দৃষ্টি সরে গিয়েছিল তা আবার নতুন করে তার প্রতি নিবদ্ধ হওয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘তবে এ কথা জেনে রাখো, আল্লাহর কাছে তাওবা কবুল হওয়ার অধিকার একমাত্র তারাই লাভ করে যারা অজ্ঞতার কারণে কোনো খারাপ কাজ করে বসে এবং তারপর অতিদ্রুত তাওবা করে।
এ ধরনের লোকদের প্রতি আল্লাহ আবার তাঁর অনুগ্রহের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং আল্লাহ সমস্ত বিষয়ের খবর রাখেন, তিনি জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা ঃ ১৭)। মহান আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে বলেন: আমার এখানে ক্ষমার দরজা একমাত্র সেসব বান্দার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে, যারা ইচ্ছা করে নয় বরং অজ্ঞতার কারণে ভুল করে বসে এবং চোখের ওপর থেকে অজ্ঞতার পর্দা সরে গেলে লজ্জিত হয়ে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী হয়।
এমন বান্দা তার ভুল বুঝতে পেরে যখনই প্রভু মহান রাব্বুল আলামিনের দিকে ফিরে আসবে তখনই নিজের জন্য তাঁর দরজা উন্মুক্ত দেখতে পাবে: ‘ আমার এ দরবারে আশাভঙ্গ হয় না কারো, শতবার ভেঙেছ তাওবা, তবু তুমি ফিরে এসো।’