ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে মুঘল স্মৃতিবাহক ছোট কাটরা

নির্মাণ ও অবস্থান
ছোট কাটরা শায়েস্তা খানের আমলে তৈরি একটি ঐতিহাসিক ইমারত। আনুমানিক ১৬৬৩ – ১৬৬৪ সালের দিকে এ ইমারতটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং তা ১৬৭১ সালে শেষ হয়েছিল। এর অবস্থান ছিল বড় কাটরার পূর্বদিকে হাকিম হাবিবুর রহমান লেনে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। ওই সময় প্রচলিত ভবনগুলো আকারের তুলনায় এই ভবনটি দেখতে অনেকটা বড় করার মতো হলেও এটি আকৃতিতে বড় কাটারা চেয়ে ছোট এবং এ কারণেই হয়তো এর নামকরণ কখন করা হয়েছিল ছোট কাটরা।
তবে ব্রিটিশদের শাসন আমলে এতে বেশকিছু বিষয় সংযোজন করা হয়েছিল। ১৮১৬ সালে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক লিওনার্দ এখানে ঢাকার প্রথম ইংরেজি স্কুল খুলেছিলেন। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে বর্তমানে ছোট কাটারা বলতে তেমন কিছুই অবশিষ্ট নেই শুধুমাত্র একটি ভাঙা ইমারত ছাড়া। তাও শুধু বিশাল ত্বরণের মত সরু গলির উপরে দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশের দোকান বাড়িঘর সবকিছুই একে এমন ভাবে ঘিরে ধরেছে যে, দেখে বোঝার উপায় নাই যে এখানে মোঘল আমলের কোন একটি স্থাপত্য ছিল।
বড় কাটরার প্রায় ১৮৩ মিটার পূর্বে হাকিম হাবিবুর রহমান লেনে বুড়িগঙ্গার তীরে মুগল (পুরাতন) ঢাকায় অবস্থিত। ছোট কাটরা ভবনটি আয়তাকৃতির এবং এর বাইরে থেকে পরিমাপ ১০১.২০ মি ঊ ৯২.০৫ মি এবং ভেতরে ৮১.০৭ মি ঊ ৬৯.১৯ মি। বাইরের প্রাচীর ০.৯১ মি থেকে ১ মি পুরু এবং এর প্রতিরক্ষা বুরুজের দেয়াল যেখানে সব চেয়ে পুরু সেখানে ১.২২ মিটার। ইমারতটি দক্ষিণ এশিয়ার ক্যারাভান সরাই-এর নমুনায় নির্মিত ও রাজকীয় মুগল কাটরার অনুরূপ। দক্ষিণের প্রবেশপথ প্রধান হলেও এতে রয়েছে উত্তর-দক্ষিণে দুটি প্রবেশপথ। কাটারার জানালার খিলান সমূহ ত্রিভুজ বিশিষ্ট।
মুঘল স্থাপত্যের নমুনা
কাটারার মিনার গলি মজবুত এবং অন্যান্য মুঘল মিনারের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট। প্রসূতি সিরিয় মেঝে কার্ড দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। কাঠের সিঁড়ি গুলো ছিল বেশ চওড়া এবং শক্তপোক্ত। একতলা একটি কক্ষে বিভক্ত করা হয়েছিল আড়াআড়িভাবে। একটি চওড়া এবং অপরটি লম্বা ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। ভল্টেড কক্ষসমূহের প্রবেশদ্বারে বড় খিলান যুক্ত আছে। ভল্টেড কক্ষসমূহ মাটির নিচে থাকায় তা ঠান্ডা ও অন্ধকার। কক্ষ গুলো সাদামাটা। খুবসম্ভবত তা তাহখানার কাজ করেছিল। ভল্টসমূহ মুগল স্থাপত্যের নমুনা হিসেবে অতি সুন্দর। বড় কাটারা তুলনায় ছোট কাটারা অপেক্ষাকৃত ছোট স্থাপত্য হলেও এর স্থাপত্য কৌশল ও অলংকরণ নির্বিচারে এটি যথেষ্ট সাদৃশ্যপূর্ণ।
শায়েস্তা খানের আমলের তৈরি ছোট কাটরা মূলত নির্মিত হয়েছিল সরাইখানা বা প্রশাসনিক কাজে ব্যবহারের জন্য। কোম্পানি আমলে ১৮১৬ সালে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক লিওনারদ ছোট কাটরায় খুলেছিলেন ঢাকার প্রথম ইংরাজি স্কুল। ১৮৫৭ সালে, এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ঢাকার প্রথম নরমাল স্কুল। বিশ শতকের প্রথম দিকে ছোট কাটরা ছিল নবাব পরিবারের দখলে। এবং তাতে তখন কয়লা এবং চুনার কারখানার কাজ চলত। ছোট কাটরায় বিবি চম্পার স্মৃতিসৌধ অবস্থিত ছিল। এক গম্বুজ, চার কোণা, প্রতিপাশে ২৪ ফুট দীর্ঘ ছিল স্মৃতিসৌধটি। তায়েশ লিখেছেন, ‘পাদ্রী শেফার্ড ওটা ধ্বংস করে দিয়েছেন।’ শেফার্ড বোধহয় কবরটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। বিবি চম্পা কে ছিলেন তা সঠিক জানা যায়নি। তবে কারো মতে তিনি শায়েস্তা খাঁর মেয়ে। বর্তমানে ছোট কাটারা কে দেখে বুঝার উপায় নাই যে এটি মুঘল আমলে একটি দর্শনীয় স্থান ছিল। ছোট কাটরাকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। তবুও এখনও এর কিছু ধ্বংসাবশেষ দেখলে বুঝা যায় মোঘল আমলে নদী তীরে দাঁড়িয়ে থাকা কাটারা কতই না সুন্দর এবং আকর্ষণীয় ছিল।