পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয় আসার পূর্বে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করো

প্রবাদে আছে, “সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।” চোখের পলক পড়তে না পড়তেই সময় চলে যায়। সময়ের এই দ্রুত চলে যাওয়া এবং মানুষের ভাবনার বিষয়টি কুরআনেও উল্লেখ আছে।
“তাদের একজন বলল, ‘তোমরা কতকাল এখানে অবস্থান করেছ? তখন কেউ বলল, ‘একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ হয়ত’। তখন বাকিরা বলল, ‘আমাদের পালনকর্তাই ভাল জানেন যে, আমরা কতকাল এখানে অবস্থান করছি।” (আল কুরয়ান-১৮:১৯)
জন্মের বিষয়টি অনিশ্চিত হলেও মৃত্যু তো সুনিশ্চিত
এ চিরসত্যটি জানা সত্ত্বেও মৃত্যুর ব্যাপারে সকলেই গাফেল হয়ে থাকে। একজন মুসলিমের অন্যতম চেতনা হল মৃত্যুর কথা অধিক পরিমাণে স্মরণ করা। কারণ, মৃত্যুর অধিক স্মরণই মানুষকে ভালো কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
কিন্তু মৃত্যু কখন হবে এ ব্যাপারে কোনো ধারণাই মানুষের নেই। তাই আমাদের করণীয় হল মৃত্যুর জন্য সদা-সর্বদা প্রস্তুত থাকা।সময়ের এই দ্রুত হারিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সময়ের গুরুত্ব প্রদানের জন্য উপদেশ দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয় আসার পূর্বে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করো; বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনের, অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতার, অসচ্ছলতার পূর্বে সচ্ছলতার, ব্যস্ততার পূর্বে অবকাশের এবং মৃত্যুর পূর্বে জীবনের।” (বুখারী, মুসলিম)
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের এই বিখ্যাত হাদিস মানুষের জীবন চলার গতিকেই পরিবর্তন করে দেয়। পথহারা মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেয়। এ হাদিসের আলোকেই মানুষ মৃত্যুর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।
কারণ, এই ৫টি বিষয় মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যারা আখিরাতের চিন্তায় মগ্ন থাকে, তারা এ বিষয়গুলি চিন্তা করে আখিরাতের জীবনের জন্য পাথেয় সংগ্রহে আত্মনিয়োগ করে।
বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনের
যৌবনে একজন ব্যক্তির যে শারীরিক সামর্থ্য থাকে, বার্ধক্যে এসে তা অনেকাংশেই লোপ পায়। ফলে একজন ব্যক্তি যৌবনে যে কাজ করার সামর্থ্য রাখে, বার্ধক্যে তা প্রায়শই সম্ভব হয়ে ওঠে না। সুতরাং যৌবনে যে কাজ করা সম্ভব, তা বার্ধক্যের জন্য ফেলা রাখা হবে সম্পূর্ণরূপে মূর্খতারই পরিচয়।
অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতার
একজন মুমিনের সর্বদাই তার সুস্থতার সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। কেউ যখন অসুস্থ হয়, তখনই সে বুঝতে পারে তার সুস্থতার গুরুত্ব কতটুকু। একজন যুবকও যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন সেও কোনো কাজ ভালোভাবে করতে পারেনা। সুতরাং, সর্বদাই সুস্থতার গুরুত্ব প্রদান করা উচিত।
অসচ্ছলতার পূর্বে সচ্ছলতার
সম্পদ আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত একটি বড় নেয়ামত। একজন সচ্ছল ব্যক্তি তার সম্পদের সাহায্যে তার সমাজের অনেক উপকারী কাজ করতে পারে। সুতরাং, আল্লাহ আমাদের যে সম্পদ দিয়েছেন, তা আমাদের থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার পূর্বেই আমাদের উচিত এই সম্পদকে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মানুষের উপকারে কাজে লাগানো।
যারা আল্লাহর দেওয়া সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাজে লাগায়, তাদের প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন, “যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজ সম্পদ ব্যয় করে, তাদের নমুনা একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষের জন্ম হয়। অতঃপর প্রত্যেকটি শীষে একশটি করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।” (আল কুরআন-২:২৬১)
ব্যস্ততার পূর্বে অবকাশের
অবকাশ আল্লাহর দেওয়া অপর একটি নেয়ামত। আমাদের প্রতিদিনের ব্যস্ততার মাঝে পাওয়া অবসর সময়কে গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা উচিত। কোনো প্রকার অনর্থক কাজে এই মূল্যবান সময়কে যদি কেউ নষ্ট করে, তবে তা হবে তার জন্য ইহকাল ও পরকাল উভয়ের জন্য ক্ষতির কারণ।
মৃত্যুর পূর্বে জীবনের
রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে সর্বশেষ যে বিষয়টির গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে, তা হলো মৃত্যুর পূর্বে জীবনের মূল্যায়ন। প্রতিটি দিনই আমাদের জন্য একটি নতুন সুযোগ নিয়ে আসে। নতুন দিন আবারো নতুন করে ভাল কাজ করার সু্যোগ সৃষ্টি করে দেয়।
কিন্তু এই জীবনযাত্রা শেষ হয়ে যেতে পারে মুহূর্তের মধ্যে। সুতরাং, আজকের জন্য যে কাজ গুলি করে রাখা প্রয়োজন, তা আগামীদিনের জন্য ফেলে রাখা বড়ই বোকামী। কেননা, আগামীদিনটি তো আমার জীবনে নাও আসতে পারে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির সাথে কবর পর্যন্ত যায়। এর মধ্যে দু’টি ফিরে আসে আর একটি মৃত ব্যক্তির সাথে রয়ে যায়। ফিরে আসা দুটি জিনিস হল তার পরিবার ও সম্পদ এবং তার সাথে থেকে যাওয়া জিনিসটি হল ব্যক্তির কৃতকর্ম।” (বুখারী, মুসলিম)
আল্লাহ উপরোক্ত হাদীসটির আলোকে আমাদেরকে বোধসম্পন্ন হওয়ার তৌফিক দান করুন।