পারিবারিক বাজেট তৈরির মাধ্যমে অর্থ সঞ্চয়ের কিছু দিকনির্দেশনা

সংসারে অর্থব্যবস্থাপনা করা প্রকৃতপক্ষেই অনেক কঠিন একটি কাজ। যার কারণে অনেকেই এটি করতে গিয়ে হিমশিম খান। মধ্যম আয়ের সংসারে এক খাতে ভালোভাবে খরচ করতে গেলে দেখা যায় আরেকটি খাতের জন্য অর্থই অবশিষ্ট থাকে না। অনেকসময় দেখা যায় মাসের অর্ধেক পার হতে না হতেই বেতনের টাকা প্রায় শেষ হয়ে যায়। এ নিয়ে সংসারে চলে নানা অর্থনৈতিক টানাপোড়া। আর এররকম পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের জন্য অর্থসঞ্চয় তো একটি কল্পনাই মাত্র। এরসকম পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে বছরের বা মাসের শুরুতেই পারিবারিক বাজেট তৈরী করুন। এই বাজেট একদিকে যেমন আপনার আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় ঘটাবে, তেমনি অর্থ সঞ্চয়েও অনেক সহায়ক হবে।
সংসারের খরচ ভালোভাবে সামলানো এবং বিভিন্ন খাতে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য মাসের শুরু থেকেই কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। আর পুরো বছরের জন্য আলাদা একটা বাজেট পরিকল্পনা করতে হবে বছরের শুরুতেই। যেহেতু দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রভাব আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায়ও পড়ে। প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দামও দিন দিন বাড়তেই থাকে। এজন্য আমাদেরকে মিতব্যয়ী হতে হবে। সংসারের খরচ মিটিয়ে অর্থসঞ্চয় করতে মাসের শুরুতেই করতে হবে পরিকল্পনা। এতে চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কিছু সঞ্চয়ও গড়ে উঠবে।
মাসের শুরুতেই পারিবারিক বাজেট
প্রথমেই সংসারের সম্ভাব্য আয়, পরিবারের সদস্যদের রুচি ও চাহিদা জেনে নিন। সে অনুয়ায়ী খরচের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করুন। মাসের শুরুতেই প্রতিটি খাতের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ পৃথক করে ফেলুন। কারণ প্রতিমাসের খরচ কখনই এক রকম হয় না। যে খাতের জন্য কোনো অর্থ ব্যয় হল না, মাসের শেষে তা সঞ্চয় করে ফেলুন। খাদ্যাভ্যাসেও কিছুটা পরিবর্তন আনুন। পরিবারে সদস্যদের শুধু মাছ, মাংস নির্ভর না হয়ে শাকসবজি খাওয়ার প্রতিও আগ্রহী করে তুলুন। এতে বাজেটের মধ্যেই সবকিছু সম্পন্ন করা সহজ হবে। লেখাপড়ার ক্ষেত্রে অবশ্য কোনো হিসাব চলে না। কিন্তু লেখাপড়ার সাথে আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হোন।
সাশ্রয়ী হোন
চিকিৎসার জন্য পূর্ব থেকেই অর্থ বরাদ্দ করে রাখুন। বিশেষ করে, পরিবারের মধ্যে যদি অসুস্থ রোগী বা বয়োজ্যেষ্ঠ কেউ থাকেন, তবে তাদের জন্য পৃথক খাত রাখুন। অনেক সময় দেখা যায় দোকানে কোনো পোশাক পছন্দ হওয়া মাত্রই আমরা কিনে ফেলি। এরকম না করে প্রয়োজনীয় পোশাকটি ক্রয় করুন। পারিবারিক বাজেট-এ মোবাইল ফোন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সচেতন হোন। এতে একদিকে তো অপচয় হ্রাস পাবে, অন্যদিকে অর্থেরও সাশ্রয় হবে। অল্প অল্প বাজার না করে একসঙ্গে কয়েকদিনের বাজার করুন। কেননা একসঙ্গে জিনিস ক্রয় করলে অর্থ সাশ্রয় হয়।
ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করুন
প্রতিমাসেই অল্প অল্প করে টাকা সঞ্চয় করুন ভবিষ্যতে ব্যয়ের জন্য। ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ও আর্থিক সচ্ছলতার জন্য প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু সঞ্চয় করা প্রয়োজন। প্রথমে খুব বেশি সঞ্চয় করতে না পারলেও অল্প দিয়েই শুরু করুন। ধীরে ধীরে আপনার আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাত্রার মানের খুব বেশি পরিবর্তন না করে সঞ্চয়ের পরিমাণটা বাড়িয়ে দিন।
মৌসুমি ব্যয়
বার্ষিক বাজেট তৈরি করলে বাজেটে মৌসুমি ব্যয়ের জন্যও আলাদা খাত রাখুন। পারিবারিক বাজেট-এ আপনার সন্তানের স্কুলের পোশাক, বই-পত্র, নতুন জুতা, ঈদে-রমজানে খরচ কিংবা হঠাত চলে আসা দাওয়াতের খরচ সেই খাত থেকে ব্যয় করুন।
বড় কেনাকাটায় সময় নিন
আপনার নতুন আসবাবপত্র বা বড় কোনো কেনাকাটা করা দরকার। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আপনার যেদিন নতুন জিনিসের কথা মনে হল সেদিনই তা কিনে ফেলবেন। দুয়েকটা দোকান ঘুরে মূল্য যাচাই করুন, অনলাইনে খুঁজুন, বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিন। এতে সময় কিছুটা বেশি লাগলেও নিশ্চিতভাবে আপনার খরচ অনেকাংশেই কমে যাবে।
পারিবারিক বাজেট ও ফিক্সড ডিপোজিট
কী পরিমাণ অর্থ আপনি রাখছেন সেটা কোনো ব্যাপার না, ব্যাপার হল আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণের একটি অর্থ সঞ্চয় করছেন কিনা। যেকোনো প্রয়োজনের সময় এটি অনেক কাজে দেবে। তাই প্রতি মাসে ফিক্সড ডিপোজিটের জন্য আলাদা পারিবারিক বাজেট রাখুন
ঋণ শোধ করুন
অনেক সময় দেখা যায় বেতনের টাকা শেষ হয়ে যাওার কারণে আমরা বন্ধু বা আত্মীয়স্বজন থেকে অর্থ ধার নেই। যেখান থেকেই ধার করুন না কেন পরবর্তী মাসের প্রথমেই চেষ্টা করুন সেটা শোধ করে দেওয়ার। বেতন পেলেই ধারের টাকাগুলো সব শোধ করে দিন। এতে আপনার প্রতি মানুষের বিশ্বস্ততা থাকবে যা প্রয়োজনের সময় অনেক সহায়ক হবে।
পারিবারিক বাজেট বাস্তবায়ন
বাজেট তৈরি করা তুলনামূলক কিছুটা সহজ হলেও পরিপূর্ণরূপে তা মেনে চলা বা বাস্তবায়ন করা বেশ কষ্টকর। তাই বাজেট বাস্তবায়নে কিছুটা কঠোর হোন। এক মাসের বাজেট ভালোভাবে মেনে চলে যদি কিছু অর্থ সঞ্চয় করতে পারেন তবে পরবর্তী মাসে নিজেকে কোনোভাবে পুরস্কৃত করুন। এটা হতে পারে পরবর্তী মাসের বাজেটে নিজের পছন্দের কোনো জিনিস যুক্ত করুন। এতে বাজেট বাস্তবায়ন করাও হবে এবং সাথে সাথে আপনার শখও পূরণ হবে।
এভাবেই সফল বাজেট এনে দিতে পারে অর্থসঞ্চয়ের পাশাপাশি আর্থিক সচ্ছলতা।