নিত্য পিঠে ব্যথার সমস্যায় কী করণীয়?

গত দিনকয়েক ধরেই বসতে গিয়ে পিঠে মৃদু একটা ব্যথা টের পাচ্ছিলেন শওকত সাহেব। যদিও শোওয়ার দোষে পিঠে ব্যথা মনে করে খুব একটা পাত্তা দেননি তিনি। এরপর আচমকাই বেড়ে গেল সেই ব্যথা, শেষমেশ পিঠের ব্যথায় কাবু হয়ে একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন শওকত সাহেব। পিঠে ব্যথা আমাদের জীবনে খুব সাধারণ একটি সমস্যা। বেশিরভাগ মানুষই কোনও না কোনও কারণে পিঠে ব্যথার সমস্যায় ভোগেন। কারওর ক্ষেত্রে এই ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী, ডাক্তার না দেখালে কমেই না, আবার কারওর ক্ষেত্রে সামান্য কিছু ঘরোয়া টোটকাতেই চট করে সেরে যায় এই ব্যথা। এরকম পিঠে ব্যথা হলে কী করবেন বা কীভাবে সতর্কতা অবলম্বন করবেন, সেই নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করব।
পিঠে ব্যথার কারণ ?
পিঠে ব্যথা নানাকারণে হতে পারে। স্পন্ডালাইটিস বা বয়সের ফলে পিঠে ব্যথা যেমন বাড়ে, তেমনই আগে পড়ে যাওয়ার ফলে কোনও ব্যথা থেকে শুরু করে হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া, দীর্ঘদিন ধরে স্ট্রেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেয়ে যাওয়া, অনেকক্ষণ একভাবে বসে কোনও কাজ করা বা শোওয়ার সমস্যার কারণেও পিঠে ব্যথা হতে পারে। আর এই পিঠে ব্যথা অনেকসময় এমন ভয়ংকর হয়ে ওঠে যে তখন পা, হাঁটু অবশ হয়ে যেতে শুরু করে, রাতে ঘুম হয় না, আবার কারওর-কারওর ক্ষেত্রে পিঠে ব্যথা হলে বমি, তলপেটে ব্যথা ইত্যাদি গুরুতর সমস্যাও হতে পারে। এরকম পিঠে ব্যথার সমস্যা যদি আপনার মাঝে-মাঝেই হয়ে থাকে, তাহলে একে আর অবহেলা করবেন না।
বরফ বা তাপ দিন
এই ‘হট অ্যান্ড কোল্ড’ ট্রিটমেন্ট পিঠে ব্যথার ক্ষেত্রে খুবই জনপ্রিয়। পিঠের যেখানে ব্যথা হচ্ছে, সেখানে সরাসরি বরফ দিকে প্রদাহ, ফুলে থাকা থেকে দ্রুত মুক্তি পাবেন। তবে নানা গবেষণায় পিঠে ব্যথা সারাতে বরফের বদলে গরম সেঁক দেওয়াকেই অনেকেই এগিয়ে রাখেন। উত্তাপ আমাদের শরীরের রক্তবাহগুলি প্রসারিত করে। ফলে পিঠে অক্সিজেন সহজে পৌঁছতে পারে এবং পেশির খিঁচুনি কমায়। এর জন্য হিটপ্যাড, আইসপ্যাক ইত্যাদি কিনে নিতে পারেন, তাছাড়া বাড়িতে হ্যারিকেন থাকলে, তার সাহায্যেও সেঁক দিতে পারেন।
পিঠে ব্যথার ওষুধ বিশ্রাম
পিঠে ব্যথা করলে খুব বেশি হাঁটাহাঁটি বা দৌড়োদৌড়ি বন্ধ করুন। শান্ত হয়ে বসে একটি বিশ্রাম নিন। আগেকার দিনে পিঠে ব্যথা করলেই ডাক্তাররা বেড রেস্টের পরামর্শ দিতেন। তবে এখন ব্যথা খুব গুরুতর না হলে এই পরামর্শ দেওয়া হয় না। তবে কোথাও পড়ে গিয়ে বা আঘাতজনিত কারণে পিঠে ব্যথা হলে অন্তত দু’দিনের জন্য পিঠকে বিশ্রাম দিন। হাঁটাহাঁটি, ভারি জিনিস তোলা, নিচু হয়ে কাজ করা বন্ধ রাখুন। এরপর অবস্থা ভাল বুঝলে দু’দিন পর আস্তে-আস্তে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা শুরু করুন।
ব্যায়াম করুন
আপনার যদি পিঠে ব্যথার প্রবণতা থাকে, তাহলে নিয়ম করে ব্যায়াম করা শুরু করুন। সকালে উঠে এই ব্যায়ামগুলি করতে পারেন। প্রথমে প্রয়োজন হলে ফিজিকাল থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে পারেন। তারপর তাঁর দেখিয়ে দেওয়া
ব্যায়ামগুলি নিজেই করতে পারেন। ব্যায়াম তলপেটের পেশি শক্ত করে এবং কশেরুকার মধ্যবর্তী ফাঁকগুলিকে চওড়া করে স্নায়ুতন্ত্রের উপর থেকে চাপ কমায়। এছাড়া স্ট্রেচিংয়ের মতো ব্যায়াম দেহের অসাড়তা সার্বিকভাবে কমায়। নিজের ইচ্ছেমতো কিছু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়ামও কিন্তু এক্ষেত্রে কার্যকরী হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন কিন্তু পিঠে ব্যথার অন্যতম কারণ। পেটে চর্বি জমলে ঘনঘন পিঠে ব্যথা হতে পারে। তাই সেই ওজন কমিয়ে যাতে সুস্থ থাকতে পারেন, সেজন্য হাঁটাহাঁটি করতে ভুলবেন না।
কীভাবে ঘুমোবেন?
পিঠে ব্যথার ক্ষেত্রে ঘুমোনোর ধরন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনার যদি ঘনঘন পিঠে ব্যথা হয়, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ঘুমোবেন কীভাবে সেটি আলোচনা করে নিন। অনেকসময় পাশ ফিরে হাঁটু সামান্য মুড়ে শুতে বলা হয়। সোজা হয়ে শুলে হাঁটুর তলায় বালিশ দিয়ে শুতে পারেন। তাহলে আরাম পাবেন।
বসার দিকে খেয়াল রাখুন
অনেকসময় ভুলভালভাবে বসলে পিঠে ব্যথা বাড়তে পারে। এছাড়া পিঠে ব্যথা যাদের হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে বিশেষ চেয়ার কিনতে পাওয়া যায়। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেগুলি কিনতে পারেন। এছাড়া একভাবে দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে থাকা ইত্যাদির কারণেও পিঠে ব্যথা বাড়তে পারে। যদি আপনার সামনে কম্পিউটার থাকে, টেবিলে বা ডেস্কে হাত দু’টি রাখুন এবং চোখকে স্ক্রিনের সঙ্গে একলাইনে রাখুন। উপকার পাবেন।
ধূমপান ত্যাগ করুন
ধূমপানের অভ্যেস পিঠে ব্যথার ক্ষেত্রে একেবারে বর্জনীয়। ধূমপানের ফলে নিউট্রিয়েন্ট যুক্ত রক্ত মেরুদণ্ডের স্পাইনার ডিস্কে যেতে পারে বা। ফলে পিঠে ব্যথার সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়া সিগারেটে থাকা নিকোটিন মেরুদণ্ডের হাড় দুর্বল করে দেয়। সেইজন্যেও ব্যথা হতে পারে।
এছাড়া পিঠে ব্যথার ক্ষেত্রে জয়েন্ট পেন দূর করার কিছু মলম দোকানে পাওয়া যায়। সেগুলি ব্যবহার করেও সাময়িক স্বস্তি পেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, পিঠে ব্যথা একেবারে দূর করতে এই মলমগুলি কিন্তু খুব একটা কার্যকরী নয়। আর পিঠে ব্যথা যদি খুব বেশি বাড়ে বা আপনি যদি একেবারেই নড়াচড়া করতে স্বস্তিবোধ না করেন, তাহলে সেক্ষেত্রে ফেলে না রেখে ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়াই উচিত।