প্রলোভন প্রতিরোধে করবেন কীভাবে?

আমি শিশুকাল থেকেই গোলমাল করতে ঘৃণা করতাম। বড় হওয়ার সাথে সাথে বুঝতে পারলাম যে, জীবনের মূল উদ্দেশ্য সিরাতে-মুস্তাকীম (সরল পথ) এর সন্ধান পাওয়া। যদিও পথটি নিজেই পরিষ্কার এবং সোজা, তবুও শয়তান, দুনিয়া এবং আমাদের নফস (অন্তর) এই পথের মাঝে অনেক বাধা সৃষ্টি করে যতক্ষণ না এটি ধাঁধার মতো আকার ধারণ করে। প্রলোভন এর হাত ধরেই আসে।
প্রলোভন কী ও কেন?
প্রলোভন একটি সর্বজনীন অভিজ্ঞতা। প্রতিটি ব্যক্তিই গুনাহ করে — হ্যাঁ, এমনকি দীর্ঘ দাড়িওয়ালা মসজিদের বৃদ্ধ চাচা এবং ভাল পরিবার থেকে আসা একজন শিক্ষার্থীও। এমনকি আদম ও হাওয়া (আলাইহিস সালাম) জান্নাতে গাছের ফল খেতে প্ররোচিত হয়েছিলেন এবং তারা ছিলেন সৃষ্টি জগতের কয়েকজন সেরা মানুষের মধ্যে অন্যতম।
যদিও গুনাহের প্রতি সকলেরই দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্নভিন্ন। আমি লক্ষ্য করেছি যে, কিছু মানুষ আছে যারা আল্লাহর রহমতের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে এবং গুনাহ করাকে কোনো বড় বিষয় মনে করে না। আবার অনেকে আছে যারা গুনাহ করার পরে হতাশ হয়ে পড়ে এবং মনে করে যে, তাদের কখনও ক্ষমা করা হবে না।
আদর্শিকভাবে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এই উভয়টির মাঝামাঝি হওয়া উচিত। যা সর্বোপরি, ইসলামের নিখুঁত ভারসাম্যের একটি নিদর্শন। আল্লাহর করুণার উপর আমাদের নির্ভর করা উচিত, তবে কেবলমাত্র যখন আমাদের দ্বারা গুনাহ হয়ে যাই তখন, যখন আমরা কোনো গুনাহের পরিকল্পনা করি তখন না। তওবা করার অর্থ হলঃ গুনাহের জন্য লজ্জা বোধ করা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং গুনাহের পুনারাবৃত্তি না করার দৃঢ় সংকল্প করা।
প্রলোভন ও গুনাহ থেকে কীভাবে রক্ষা পাবেন?
তবে কখনও কোনো নির্দিষ্ট গুনাহ না করা অসম্ভব কাজ বলে মনে হতে পারে। এখানেই “প্রলোভন”এর ধারণাটি আসে। আমরা সাধারণত যে গুনাহগুলি সম্পাদন করি সেগুলি আমাদের কাছে সবচেয়ে লোভনীয় বা প্রতিরোধ করা সবচেয়ে কঠিন বলে মনে হতে পারে।
তবে মনে রাখবেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের মধ্যে উত্তম হল ঐ ব্যক্তি যে গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়।
যাইহোক, কোনো সন্দেহ নেই যে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। তার মানে, কোনো গুনাহে জড়িয়ে পড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করার চেয়ে গুনাহের পথে পা না বাড়ানোই বেশি উত্তম।
অন্য সবার মতো আমিও গুনাহমুক্ত নই। তবে এখানে কিছু টিপস শেয়ার করছি যা ব্যক্তিগতভাবে আমাকে প্রলোভন প্রতিরোধ করতে এবং গুনাহ এড়াতে সহায়তা করেছেঃ
১- ভাল মানুষের সহচার্য্য অবলম্বন করুন
এটি নববী পরামর্শ। আপনার যদি ভাল বন্ধুবান্ধব থাকে যারা ইসলাম এবং আল্লাহর সাথে ভাল সম্পর্ক রাখে, তবে আপনিও তাদের মত হয়ে যাবেন।
এর বিপরীতটিও সত্য, আপনার যদি এমন বন্ধু থাকে যারা নির্লজ্জভাবে গুনাহের কাজ করে বা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে চিন্তা করে না তবে আপনিও তাদের পথে চলতে শুরু করবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার বন্ধুরা অনর্থক কথাবার্তা বা হাসিতামাশা এবং গীবত উপভোগ করে তবে আপনিও তাদের সহচার্য্যে থাকাকালীন এই গুনাহ গুলো না করে থাকতে পারবেন না।
২- মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করুন
বেশিরভাগ মানুষই সাধারণত মৃত্যুর কথা বলা এড়িয়ে যান কারণ তারা মনে করেন এটি একটি ভীতিজনক এবং হতাশাজনক বিষয়। মুসলমান হিসাবে আমাদেরকে ঠিক উল্টো কাজটি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আমরা প্রায়শই মৃত্যুর কথা চিন্তা করতে উত্সাহিত হই কারণ এটি আমাদের প্রলোভন থেকে মুক্ত হতে এবং পরকালীন জীবনকে ভুলে যাওয়া থেকে হেফাযত করে। এছাড়া মৃত্যুর স্মরণ আমাদেরকে আল্লাহর দিকে চূড়ান্ত প্রত্যাবর্তনের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়।
৩- আরও বেশি ইবাদতে মনোনিবেশ করুন
এটি সাধারণ মনে হলেও এটি সম্পাদন করা অনেক কঠিন হতে পারে। প্রত্যহ ৫ ওয়াক্ত নামাজ সময়মত আদায় করা, নফল রোজা রাখা, কুরআন তেলাওয়াত করা- এই সমস্ত কিছুর জন্য শৃঙ্খলা, উত্সর্গ এবং ত্যাগের প্রয়োজন (যেমন দুনিয়ার উপর আল্লাহকে প্রাধান্য দেওয়া)।
তবে এর অর্থ এই নয় যে, যারা ইবাদতের জন্য তাদের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেন তাদের দ্বারা গুনাহ হয় না, তবে আমরা যদি আমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আরও বেশি ইবাদতে মগ্ন হই তবে ইনশাআল্লাহ এটি আমাদেরকে গুনাহ থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করবে।
এগুলি আমার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে কয়েকটি টিপস। প্রলোভন ও গুনাহ থেকে দূরে থাকা সহজ বিষয় নয়; তবে এটি দুনিয়ার জীবন এবং পরকাল উভয় ক্ষেত্রেই পুরষ্কারযোগ্য।
আল্লাহ আমাদেরকে ঈমানী বিষয়ে আন্তরিক হওয়ার এবং অবৈধ প্রলোভন থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন।
আমীন।