বদরের যুদ্ধে প্রথম শহীদ হন হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা:)

বদরের যুদ্ধে-র দিন কুরাইশরা প্রথমে তাদের শিবির ভেঙে ফেলে এরপর তারা বদরের দিকে রওনা দেয়। মুসলিমদের বর্তমান পরিস্থিতির খবর সংগ্রহ করার জন্য তারা উমাইর ইবনে ওয়াহাবকে পাঠায়। তিনি তথ্য সংগ্রহ করে ফিরে আসেন এবং জানান যে মুসলিমদের বাহিনী ছোট। আবার তাদের সাহায্যের জন্য কোন নতুন সেনাদল আসার সম্ভাবনা নেই। তিনি আরো বলেন যে তারা সুবিন্যাস্ত ভাবে যুদ্ধের জন্য নিজেদেরকে তৈরি করে প্রস্তুত হয়ে আছে। ফলে তাদের হাতে কুরাইশদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি।
বদরের যুদ্ধের পূর্বে কুরাইশদের ভয়
ঐ সময়ে আরবের যে কোন যুদ্ধে হতাহতের পরিমাণ খুব একটা বেশি হতো না। তাই বেশী হতাহত হওয়ার আশঙ্কার কথা শুনে কুরাইশদের মনোবল দুর্বল হয়ে গেল। এতটাই দুর্বল হয়ে গেল যে তারা নিজেদের মধ্যে তর্কে জড়িয়ে পড়লো। তাদের মধ্যে একজন অন্যতম নেতা হাকিম ইবনে হিজাম তাদের আরেক নেতা উতবা ইবনে রাবিয়াকে এই যুদ্ধের স্থান থেকে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। উতবা এ বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করেন। তবে তিনি এও বলেন নাখলায় নিহত হওয়া আমর ইবনে হাদরামির রক্তপণ পরিশোধ করতেও তিনি নিজে প্রস্তুত।
তিনি বলেন আবু জাহল এ বিষয়ে রাজি নন। তাই তিনি হাকিম কে বলেন তিনি যেন আবু জাহলকে রাজি করান। উতবা উপস্থিত কুরাইশদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন যে এই যুদ্ধে তাদের সাথে সংঘর্ষের ফলে তাদের ভাইয়েরাই নিহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে যুদ্ধে যদি তারা বিজয়ী হয়েও যায় নিহতদের লাশ দেখতে তারা পছন্দ করবে না এবং আত্মীয়দের হত্যাকারী হিসেবে তারা পরিচিতি লাভ করবে। সুতরাং তার পরামর্শ ছিল যে কুরাইশরা মক্কায় ফিরে যাক এবং মুহাম্মদ কে আরবের অন্য গোত্র দের জন্য ছেড়ে দেয়া হোক। অন্য গোত্রের কেউ যদি মোহাম্মদ কে হত্যা করে তবে তারা নির্দোষ থাকলো আর তাদের উদ্দেশ্যও সফল হলো। হাকিম ইবনে হিজাম আবু জাহলের কাছে গিয়ে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। তবে আবু জাহল কোন অবস্থাতেই যুদ্ধ না করে ফেরার পক্ষের ছিলেন না।
বদরের যুদ্ধে আবু জাহেলের জেদ
তিনি খুব কঠোরভাবে বলেন যে তিনি যুদ্ধ না করে কোনো অবস্থাতেই ফিরবেন না। সেই সাথে এই প্রস্তাবনাকে তিনি ধিক্কার জানান। ইসলাম প্রচারের শুরুর দিকে উতবা এর ছেলে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এবং তার এই ছেলে এই মুসলিম দলে রয়েছে। এই ছেলেকে বাঁচানোর জন্য তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তিনি ধিক্কার জানান। এ কথা শোনার পর তিনি বিব্রতবোধ করেন এবং তিনি বলেন যে তিনি কাপুরুষ নন। মোহাম্মদের সাথে তিনি তার চূড়ান্ত বোঝাপড়া না করে তিনি ফিরবেন না। আবার আবু জাহল নাখলায় নিহত আমরের ভাইয়ের কাছে গিয়ে অভিযোগ করে বলেন যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে উতবা চলে যেতে চাইছেন তাই তার ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়া সম্ভব নয়। এই খবর শোনার পর নিহত আমরের ভাই আমির নিজের জামাকাপড় ছিরতে থাকে এবং সারা শরিলে ধুলোবালি মেখে মাতম করতে থাকে।
এসব মিলিয়ে যুদ্ধ বন্ধের জন্য হাকিমের যে তৎপরতা ছিল তা ব্যর্থ হয়ে যায়। কুরাইশদের আসওয়াদ ইবনে আবদুল আসাদ মাখজুমি যুদ্ধের শুরুতে এগিয়ে আসে এবং তিনি ঘোষনা করে যে তিনি মুসলিমদের পানির উৎস অর্থাৎ পানির কূপ দখল করে নেবেন না হয় এজন্য তিনি তার জীবন বিসর্জন দিবেন। হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা:) এগিয়ে এসে তার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হন। লড়াইয়ের এক পর্যায়ে আসওয়াদের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আহত অবস্থায় সে চৌবাচ্চার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে এবং সীমানার ভিতরে প্রবেশ করে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার জন্য। হামজা তাকে হত্যা করে। আর এই মৃত্যুই ছিল বদরের যুদ্ধের প্রথম মৃত্যু।