বিবাহ হল চারিত্রিক আত্মরক্ষার শক্ত হাতিয়ার

বিবাহের বন্ধন মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত. এই বিবাহ দ্বারা একজন বান্দা তার শারীরিক,মানসিক,আত্মিক-আধ্যাত্মিক,সামাজিক সকল ক্ষেত্রেই লাভবান হয়ে থাকে। বিবাহ চারিত্রিক আত্মরক্ষার এক শক্ত হাতিয়ার। রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ অনুসারে এক আদর্শ পরিবার গঠন, জৈবিক চাহিদা পূরণ, সমাজ ব্যবস্থায় ভারসাম্য বজায় রাখা, এবং উপলব্ধির উচ্চতর স্তর প্রাপ্তির অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে বিবাহ।
বিবাহ কেন করা উচিৎ?
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেনঃ “ তাঁর মহিমার আরেকটি নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও। তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক মমতা ও সমমর্মিতা সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীলদের জন্যে এর মধ্যে শিক্ষণীয় নিদর্শন রয়েছে। ” (সূরা রুম- আয়াত ২১)
কল্যাণকর ধর্মীয় আইন পালনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ জীবনের সূচনার বৈধ মাধ্যম হচ্ছে বিবাহ। বিবাহ জাগতিক,লৌকিক এবং শুধুমাত্র আনন্দ উল্লাস করার জন্য নয়। বর্তমান সময়ে বিবাহের নামে যে পরিমাণে অপচয়, পরিপূর্ণ ধর্মবিরুদ্ধ অনুষ্ঠান, সর্বোপরি অপসংস্কৃতির যে চর্চা আমরা দেখতে পাই তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বিবাহের পবিত্রতা এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা বজায় রাখা উচিত। রসূলুল্লাহ সা: বিবাহে এই দোয়া পাঠ করতেন, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের বরকত প্রদান করুন এবং তোমাদের ওপর তাঁর বরকত বর্ষিত হোক এবং তোমাদের মধ্যে মঙ্গলপ্রদ মিলন হোক। আল্লাহ তায়ালা যেন তার (স্ত্রীর) কল্যাণে তোমাকে প্রচুর অনুগ্রহ প্রদান করেন।’ [ইবনু মাজা]
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ব্যাপারে পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ বলেনঃ “ তারা তোমাদের পোশাক আর তোমরাও তাদের পোশাক। ” (সূরা বাকারা- আয়াত ১৮৭)। পোশাক যেমন মানবদেহে কে সকল প্রকার নগ্নতা, অশ্লীলতা, থেকে রক্ষা করে, বিবাহিত জীবনেও ঠিক তেমনি ভাবে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরকে রক্ষা করবে। একই প্রসঙ্গে মিসকাত শরীফে এরশাদ আছে “যে ব্যক্তি বিয়ে করল তার অর্ধেক দিন-ঈমান পূর্ণ হয়ে গেল, সে যেন বাকি অর্ধেকের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে”। হাদিসে আরও উল্লেখ আছে “স্বামী-স্ত্রী যখন একান্তে বসে আলাপ করে, হাসি-খুশী করে তার সওয়াব নফল এবাদতের মতো”।
স্বামী স্ত্রীর উপর কী কী দায়িত্ব অর্পণ করে?
বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর দায়িত্ব অর্পিত হয়। ধর্মীয় অনুশাসন, সুবিবেচনা, মমতা, এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে এই দায়িত্ব পালনের পথ সুগম হয়। এখানে একজন অন্যের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করতে হবে।
সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে বিয়ে করার আদেশ দেয়া হয়েছে ইসলামে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিয়ে না করা শরিয়ত বিরুদ্ধ কাজ। কেননা বিয়ে কেবল ভোগ-বিলাসের জন্য নয়, বরং বিয়ে মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে সহায়তা করে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘হে যুবসমাজ, তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিয়ে করা কর্তব্য। কেননা বিয়ে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা সিয়াম হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম।’ [বুখারি, মুসলিম, মিশকাত হা-৩০৮০]।
কীভাবে বিবাহ করা উচিৎ?
বিবাহেরপূর্বে পাত্র-পাত্রী পরস্পরকে দেখে নেওয়া উচিত। মুগীরা ইবনে শু‘বা (রাঃ) বলেন, আমি জনৈক নারীকে বিবাহের প্রস্তাব করলাম। রাসূল (সাঃ) আমাকে বললেন, ‘তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাকে দেখে নাও। কেননা এতে তোমাদের উভয়ের মধ্যে ভালবাসা জন্মাবে’।(তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩১০৭)। পাত্রী দর্শনের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে পাত্রের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন মিলে ১০/১২ জনের একটি দল পাত্রীর বাড়ীতে যায়। তারা পাত্রীকে সবার সামনে বসিয়ে মাথার কাপড় সরিয়ে, দাঁত বের করে, হাঁটিয়ে দেখার যেপদ্ধতি সমাজে প্রচলিত আছে, তা ইসলাম সম্মত নয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে একটি খুবই প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।এর ফলে পূরণ হয় জৈবিক চাহিদা। ঈমানের পরিপূর্ণতা অর্জন হয়। জিনা-ব্যবিচারের মতো বড় বড় গোনাহ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। নৈতিক চরিত্রের উন্নতি ঘটে। বংশ পরম্পরা অব্যাহত থাকে। সুখময় সমাজ ও আদর্শ পরিবার গঠন সম্ভব হয়। মানসিকভাবে দেহ ও মন সুস্থ থাকে। মনে প্রশান্তি আসে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর হয়। সর্বোপরি ইহ ও পরকালীন কল্যাণ লাভ হয়। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককে ইসলামি অনুশাসন মেনে বিবাহ করার মাধ্যমে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের তাওফিক দান করুন। আমিন।