বড়, মেজ, ছোট – কোন সন্তানের উপর বেশি নজর দেবেন?

আমরা প্রায় প্রত্যেকেই প্রতিদিন নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই। কখনও সেই চ্যালেঞ্জ আসতে পারে পেশাগত বিভিন্ন কারণে, আবার কখনও বা হতে পারে ব্যক্তিগত আবার কখনও পারিবারিক কোনও বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। এই প্রসঙ্গে আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন সন্তানকে সঠিকভাবে প্রতিপালন করাটাও কিন্তু বড় কোনও চ্যালেঞ্জের থেকে কম নয়। বিষয়টি নিয়ে একটু বিশদেই আলোচনা করা প্রয়োজন।
প্রথম সন্তানের জন্ম ঘিরে আশা-আকাঙ্ক্ষা
যে কোনও বাবা মা-ই তাঁদের প্রথম সন্তানকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন দেখেন, বলা যায় প্রথম সন্তানের প্রথম জন্মদিন উদযাপনের পাশাপাশি তাঁর প্রথম কথা বলতে শেখা, সব বিষয়েই বাবা-মা-এর বিশেষ আগ্রহ থাকে। তবে, প্রথম সন্তানকে বড় করার এই পর্যায়ে তাঁরা কিন্তু বিভিন্ন ওঠা-পড়ার সম্মুখীন হন, একইসঙ্গে প্রায় প্রত্যেকদিনই নিত্য-নতুন রূপে তাঁরা নিজেদেরকে আবিষ্কার করতে শেখে, শিশুকে বড় করার এই সময়ে তারা নতুন নতুন অভিজ্ঞতারও সম্মুখীন হয়ে থাকেন।
প্রথম সন্তানের বড় হওয়ার ক্ষেত্রে যেমন তাঁর বাবা-মায়ের বিশেষ অবদান থাকে, ঠিক একইরকমভাবে প্রথম সন্তান বড় হওয়ার পরে তার উপরেও অলিখিত কিন্তু দায়িত্ব-কর্তব্য এসে যায়। প্রথম সন্তানকে দেখেই পরিবারের অন্যান্য শিশুরা অনেক বিষয় জানতে পারে, বলা যেতে পারে প্রথম সন্তানের আচরণই যে কোনও পরিবারের ক্ষেত্রেই এক মানদণ্ড রূপে রক্ষা পেয়ে থাকে। তাই প্রথম সন্তানকে বড় করে তোলার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে অভিভাবকদের কিছু দায়িত্ব এসেই যায়।
কনিষ্ঠ সন্তানের বড় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে
যে সকল পরিবার পাঁচটি বা তার বেশি সন্তান-সন্ততি সমৃদ্ধ, তারা সত্যিই খুবই ভাগ্যবান। কিন্তু এই প্রসঙ্গে আমাদের একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, কনিষ্ঠ সন্তানের প্রতি বাবা-মা-এর কর্তব্য পালন অনেক ক্ষেত্রেই প্রথম সন্তানের মতো কখনওই হয়ে উঠতে পারে না। তবে পরিবারের সকলের ভালবাসা, দায়িত্ববোধ, কর্তব্যের গুণে সর্বকনিষ্ঠ সন্তানটিও ভাল ভাল গুণ নিজেদের জীবনে রপ্ত করতে শিখে যায়। সুতরাং, আপনি যদি আপনার অন্যান্য সন্তানদের অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে বড় করে থাকেন, তাহলে দেখবেন সে বড় হয়ে তার অন্যান্য ভাই-বোনেদের প্রতি প্রয়োজনীয় দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছে।
মাঝের বা মেজো সন্তানদের প্রতি বিশেষ দায়িত্বপালন
অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে দেখা গিয়েছে যে, বড় এবং কনিষ্ঠ সন্তানদের মাঝে যে সন্তানটি রয়েছে তার প্রতি বাবা-মায়েরা বিশেষ নজর দিতে পারেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কনিষ্ঠ সন্তানের প্রতি তাদের সজাগ দৃষ্টিভঙ্গি আপনার মেজো সন্তানের মনে নানা ধরনের আশঙ্কা তৈরি করে, তার মনে হতে পারে সে বাবা-মায়ের স্নেহছায়া থেকে সবসময়ই ব্রাত্য। কাজেই এই পরিবেশ যাতে কখনওই তৈরি হতে না পারে, তার প্রতি আমাদের সজাগ থাকতে হবে। প্রয়োজনে বাবা-মায়েদেরও উচিত সকল সন্তানের প্রতিই যত্নশীল হওয়া। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার একটি অ্যানালাইসিস গ্রুপ এবং ইউনিভার্সিটি অব সিডনির সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় জানা গেছে সংসারে মেজ সন্তানরা ব্যক্তিগত এবং কর্ম জীবনে বেশি সফলতা লাভ করেন। ৫০০০ মানুষের উপর জরিপ চালিয়ে পাওয়া তথ্য মতে, পরিবারের মেজ সন্তানরা অনেকেই নিজেদেরকে অবহেলিত এবং একা মনে করেন। কিন্তু তারাই বাস্তবে বেশি সফল।
লিঙ্গগত বিভাজন
বাবা-মায়েরা অনেকক্ষেত্রেই নিজেদের সন্তানদের মধ্যে লিঙ্গগত বিভাজন তৈরি করে থাকেন। এশিয়ার দেশগুলিতে এইধরনের রীতি আমাদের বিশেষভাবে চোখে পড়ে। কখনও কখনও কোনও পরিবারে বাড়ির বড় ছেলেটি ‘আব্বু’ বা পিতার অনুরূপ হিসেবেও ভাবা হয়ে থাকে। বিষয়টি যদি কেবলমাত্র ভাবনার পর্যায়তেই থাকত তাহলে বোধহয় কোনও সমস্যা হত না, কিন্তু এই ধরনের বিভাজনের ফলে অনেক সময়েই পুত্র সন্তানের উপর অনেক ছোট বয়স থেকেই বিভিন্ন নির্দেশিকা জারি হতে পারে। সেই নির্দেশিকা ভাল-খারাপ উভয়ই হতে পারে। অন্যদিকে পরিবারে মেয়েদেরকে নিয়েও বিশেষ নিয়ম-রীতি পালনের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়। দায়িত্ব পালন একদিকে ভাল কিন্তু খুব ছোট বয়সেই সেগুলো যাতে তাঁদের পক্ষে বোঝা হয়ে না যায়, তার প্রতিও আমাদের নজর দেওয়া প্রয়োজন।
অন্যান্য বৈষম্য
অন্যান্য বিভাজন বা বৈষম্যমূলক আচরণ অনেকক্ষেত্রেই সন্তান প্রতিপালনের পথকে কঠিন করতে পারে। কোনও একজন সন্তান লেখাপড়াতে ভাল হলে তার কেরিয়ারের প্রতিই একমাত্র যত্নশীল হওয়ার প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে অন্যান্য সন্তানদের মধ্যে ঈর্ষা জন্মাতে পারে, কাজেই প্রতিটি সন্তানের প্রতি ইতিবাচক এবং যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগী হওয়া
আপনার সন্তানের শরীরের প্রতি অর্থাৎ তাদের সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলার দায়িত্ব একমাত্র আপনার হাতেই। আপনিই করতে পারবেন। তাই ছোটবেলা থেকে তাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের প্রতি আমাদের বিশেষভাবে যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। খুব ছোটবেলাতেই তারা যদি কোনও কঠিন রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে প্রথমেই উপযুক্ত নিরাময়ের পদ্ধতি মেনে চলতে হবে।
উদাহরণ সহকারে শিক্ষাপ্রদান- সন্তানেরা ভুল করবেই… আর ভুল থেকেই তারা নতুন নতুন বিষয় চিনবে, জানবে এবং শিখবে। বলে রাখা প্রয়োজন এই চেনা জানার পরিধি তৈরি হবে বাবা-মায়ের হাত ধরে। কাজেই আপনার সন্তান কোনও ভুল করলে তাকে বকাবকি না করে, কেন এবং ঠিক কোন কারণে তার কাজটি করা ভুল হয়েছে, তা আপনাকেই উপযুক্ত যুক্তি সহকারে বোঝাতে হবে।
এইভাবেই আপনি আপনার সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তোলার পথে তাকে সাহায্য করতে পারেন।