মুসলমান হিসেবে আসুন নিপীড়িত পরিবেশের পাশে দাঁড়াই

মুসলমান সম্প্রদায় সামগ্রিকভাবে, বর্তমানে এবং ঐতিহাসিক দিক থেকেও আমাদের ধর্মে মানবাধিকার, নিপীড়িতদের জন্য ন্যায়বিচার এবং বিশ্ববাসীর জন্য শ্রদ্ধা স্বরূপ আল্লাহ তা’আলা আমাদের মধ্যে যে মূল্যবোধ সৃষ্টি করে দিয়েছেন সেটিকে নিয়ে গর্ব করা চলে। প্রকৃতপক্ষে, যখন স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের প্রথম দাওয়াত শুরু করেছিলেন তখন তা ছিল কন্যা শিশু হত্যার বর্বরোচিত চর্চাকে নিন্দা ও নির্মূল করা এবং সুরা নিসার উদাহরণ অনুসারে নারীর অধিকার ও মর্যাদাকে আরও সমুন্নত করা।
ব্যক্তি অধিকার থেকে শুরু করে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা সহ প্রাকৃতিক জগতকে সম্মান করার প্রয়োজনীয়তাও ইসলাম শিখিয়েছে। কুরআন নিজেই প্রাকৃতিক বিশ্বের জীববৈচিত্র্য কাব্যিকতা পূর্ণ আয়াতের মাধ্যমে তুলে ধরেছে এবং আধুনিক বিজ্ঞানীরা এসব জটিল বিষয় এখনও আবিষ্কার করে চলেছেন।
মুসলমান সমাজের কর্তব্যঃ
মানুষের দ্বারা কৃত বিভিন্ন কর্মকান্ড যেমন জীবাশ্ম জ্বালানী জ্বালানীর দ্বারা উৎপন্ন অধিক পরিমাণে গ্রীনহাউস গ্যাস যা আমাদের বায়ুতে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে, তা গ্লোবাল ওয়ার্মিং সৃষ্টি করছে, যা আমরা যে পৃথিবী বাস করি তা দ্রুতই ধ্বংস করে দিচ্ছে। বৈশ্বিক মাংস শিল্প কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বন উজাড় এবং পানি সংরক্ষণ মূলত বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন অপসারণ এবং মানুষের বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত পানি এবং আবাদযোগ্য জমি হ্রাস করে দেয় যা পৃথিবীর প্রাকৃতিক ক্ষমতা হ্রাস করে। পানি ও জমি ঘাটতির পাশাপাশি বায়ুমণ্ডলীয় পরিবর্তন বড় ধরণের ঝড়, ব্যাপক বন্যা, খরা এবং খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে। যদিও পৃথিবীতে অতীতে আপেক্ষিক গরম এবং শীতল হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল, এখানে বিজ্ঞানটি পরিষ্কার- আমাদের বায়ুমণ্ডলের দ্রুত উষ্ণায়ন সরাসরি মানুষের আচরণের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং আমরা অবিলম্বে সচেতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সুশীল সমাজ অচিরেই ভয়ানক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।
যদিও কুরআন আমাদেরকে স্পষ্টভাবে অসংখ্য আয়াতে নির্দেশনা দিয়েছে আল্লাহর প্রতি আমাদের আনুগত্যের অংশ হিসাবে পৃথিবী ও পৃথিবীবাসীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নবান হতে, কিন্তু আমরা পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিচ্ছি এবং এর ফলে আমরা সরাসরি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে কঠিন করে তুলছি এবং পরোক্ষভাবে আমাদের সমাজকে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছি।
আমাদেরকে অবশ্যই সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার না করার কারণে জবাবদিহি করতে হবে, যা আমাদের ঈমানেরই একটি অংশ।
মসজিদের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টিঃ
এজন্য আমাদের উচিত আমাদের মসজিদগুলিতে এবং আমাদের বৃহত্তর সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা যাতে আমরা এই দুর্বিষহ জীবন থেকে বের হয়ে একটি সবুজ শ্যামল পৃথিবী গঠন করতে পারি। হালাল জীবন যাপন করার অর্থ কী তা আমাদেরকে পুনরায় মূল্যায়ন করতে হবে। একটি সহজ তবে যুগান্তকারী পরিবর্তন আমরা ঘটাতে পারি আমাদের খাবারের তালিকা নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে। মাংস শিল্প জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রভাব সৃষ্টিকারী একটি বৃহত্তম মাধ্যম (এবং হ্যাঁ-এর মধ্যে হালাল মাংসও অন্তর্ভুক্ত)। পশ্চিমারা পশু থেকে তৈরি বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার করে এবং আমরাও এই বিষয়টিকে গুরুত্বহীন মনে করি কারণ কিছু খাওয়ার অনুমতি রয়েছে মানে তার অর্থ এই নয় যে, আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতে তা গ্রহণ করব আর তা ন্যায়সঙ্গত হবে। মুসলমান হওয়ার দায়িত্ব পালন করতে হবে আমাদের।
দুর্ভাগ্যক্রমে, আমাদের কাছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য অপেক্ষা করার মতো বিলাসিতা নেই যেহেতু বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে অনেকেই এটা মেনে নিয়েছেন যে, আমরা যদি আজকেই আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে কাজ না করি তবে অচিরেই আমরা এই বায়ুমণ্ডলীয় পরিবর্তনকে থামানোর বা হ্রাস করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলব। যেহেতু আমাদের পৃথিবী অস্থিতিশীলতার পথে চলছে তাই আমরা আশা করতে পারি না যে, আমাদের সমাজ এবং সরকার এত কিছুর পরেও সুরক্ষিত থাকবে। সুতরাং, মুসলমান হিসাবে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব নিপীড়িত ও নির্বোধদের পাশে দাঁড়ানো এবং কোনো কিছুই ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব না যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এমন একটি প্রাকৃতিক-ন্যায়বিচারের মডেল তৈরি না করব, যা প্রাকৃতিক বিশ্বকে মানবতার প্রত্যক্ষ প্রসারণ হিসাবে গ্রহণ করবে।