রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর ঈদুল আযহা উদযাপন

যিলহজ্জ্বের ১০ তারিখ কুরবানীর দিন।
যিলহজ্জ্ব মাসের দশম দিনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণঃ এই দিনে ঈদুল আযহা আবার হজ্জ্বও এই দিনে পড়ে।
ইবনে উমর(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত,
“নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের সময় কুরবানির দিনে জামারাতের মাঝে দাঁড়িয়ে বলেছিলেনঃ
“এটি হজ্জ্বের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ্ দিন” (ইবনে মাজাহ)
এটি বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের মধ্যে যারা হজ্জ্ব পালন করছেন না তাদের জন্য বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ্ দিন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল কুরবানির দিন।” (আবু দাউদ)
হজ্জ্ব পালনকারী হজ্জ্বযাত্রীদের জন্য যিলহজ্জ্বের দশম দিন সত্যই এক মহান দিন; তারা এই দিনে কিছু বিরল নেক আমল করে থাকেন, বাকি ৩ দিনও তাঁরা এগুলি অনুসরণ করেন।
এই মহান আমলগুলি হলঃ জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করা; পশু কুরবানি করা; মাথা মুণ্ডন করা (পুরুষদের জন্য) বা চুল কাটা (মহিলাদের জন্য); তাওয়াফ করা; সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সা’ই করা।
পরিশেষে, এই সমস্ত পবিত্র ও প্রতীকী অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার পরে, হজ্জ্বযাত্রীরা গোসল করেন এবং ইহরাম খুলে ফেলেন; এটি একজনের জন্য তাঁর স্ত্রীর সাথে যৌন সম্পর্কের নিষেধাজ্ঞা ব্যতীত সকল হজ্জ্ব নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটায়।
একজন মুসলমান হজ্জ্ব পালনকারী হোক বা বিশ্বের অন্য কোথাও উপস্থিত থাকুক, যিলহজ্জ্বের ১০ম থেকে ১৩তম দিনগুলি আল্লাহর স্মরণ ও ইবাদতের সাথে জড়িত বিশেষ কয়েকটি দিন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“আরাফার দিন, কুরবানির দিন এবং তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলো আমাদের উত্সবের দিন, হে মুসলমানেরা, এই দিনগুলো হল পানাহারের দিন।” (আবু দাউদ)
কুরবানির মাংস প্রস্তুত হওয়ার আগে সকালে না খাওয়া
ঈদুল আযহার নামাজ ঈদুল ফিতরের মতোই আদায় করা হয়। দিনটি শুরু হয় ফজরের নামাজের পরে গোসল সম্পাদনের মধ্য নিয়ে এবং এরপর পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে ঈদের নামাযে যাওয়া হয় তাকবীর পাঠ করতে করতে।
তবে এই ঈদের একটি পার্থক্য রয়েছে এবং সেটি নামাযের পরে কুরবানি দিতে হবে এমন প্রাণীর সাথে সম্পর্কিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদাহ(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে,
“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন সকালে না খেয়ে নামাজের জন্য বের হতেন না এবং ঈদুল আযহার দিন নামাজ থেকে ফিরে এসে তাঁর কুরবানী থেকে তিনি খেতেন।” (তিরমিযী)
কুরবানি- যে আমলকে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন
১০তারিখ সকালে ঈদের নামাজের পরে যত তাড়াতাড়ি পশু কুরবানি দেওয়া হবে পুরষ্কার তত বেশি পাওয়া যাবে। তবে কুরবানি যিলহজ্জ্বের ১০-১৩ যেকোনো দিনই দেওয়া যায়।
কুরবানির মাংস খাওয়া এবং অন্যকে দেওয়া
আল্লাহ মুসলমানদেরকে কুরবানির মাংস খেতে এবং অন্যকে দিতে কুরআনে আদেশ দিয়েছেনঃ
“অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্থকে আহার করাও” (আল কুরআন-২২:২৮)
নবীজী মাংস খাওয়া পছন্দ করতেন, তবে তা সবসময় না। তবে তিনি লোকদেরকে কুরবানির মাংস থেকে খেতে উৎসাহ দিতেন। হযরত আয়েশা(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“কিছু খাও, কিছু সঞ্চয় কর এবং কিছু গরীবদের মাঝে বন্টন করে দাও।” (নাসাঈ)
এই আদেশটি নবীজীর জীবনের কেবল এক বছর বাদে বাকি সবসময় জারি ছিল, যে বছর তিনি মুসলমানদেরকে কুরবানির মাংস ৩দিনের বেশি সংরক্ষণ করতে নিষেধ করেছিলেন। ৩দিন পর যা অবশিষ্ট ছিল তা গরিব ও অসহায়দের মাঝে বিলিয়ে দিতে বলেছিলেন।
আবিস(রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আয়েশা(রাযিঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ
“নবীজী কি কুরবানির মাংস ৩দিনের বেশি সময় ধরে খেতে নিষেধ করেছেন?”
আয়েশা(রাযিঃ) উত্তরে বললেনঃ
“নবীজী শুধু এক বছরই নিষেধ করেছিলেন, যে বছর মানুষ অনেক ক্ষুধার্ত ছিল। তিনি ধনীদেরকে বলেছিলেন দরিদ্রদেরকে খাওয়ানোর জন্য। কিন্তু পরের বছর আমরা একটি ভেড়ার কিছু অংশ ১৫ দিন পর খেয়েছিলাম।”
তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলঃ
“কী আপনাকে এমন করতে বাধ্য করেছিল?”
তিনি হেসে উত্তর দিলেনঃ
“আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার আগে পর্যন্ত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবার কখনও টানা তিন দিন ভরপেট রুটি ও মাংস একসাথে খেতে পারেননি। ” (বুখারী)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদেরকে উৎসাহ দিতেন কুরবানির মাংস থেকে খেতে, তবে তিনি নিজে খুব বেশি খেতেন না। তিনি নিজের জন্য কঠোরতা ও দারিদ্রতা পছন্দ করতেন। তিনি অভাবীদের মাঝে কোরবানীর মাংস বিলিয়ে দিতেন। আর এজন্যই অভাবীদের মাঝে মাংস বিতরণের জন্য আমাদেরকেও তিনি উৎসাহ দিয়েছেন।