রোজা রেখে ওজন কমানো কি ঠিক মাহে রমজানে?

রোজায় ওজন কমানোর ক্ষেত্রে খাবারের কোনো সাধারণ নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। সেটি নির্ভর করবে যার যার নিজস্ব ওজন ও উচ্চতার ওপর। তাই পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ডায়েট করা ভালো। অন্যথায় অসুস্থ বা দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
রমজানে নিজের বেপরোয়া খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এনে লাগাম টানতে পারেন ওজনের। সে ক্ষেত্রে সাহরি, ইফতার ও রাতের খাবারের তালিকায় কিছু পরিবর্তনই যথেষ্ট। বাড়তি পরিশ্রম করে ঘাম ঝরানোর দরকার নেই। এ ব্যাপারে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, ‘রোজায় কেউ ওজন কমাতে চাইলে প্রথমেই ভাজা ভুনা ইফতারি একেবারেই বাদ দিতে হবে। বাইরের জাংক ফুড পুরোপুরি পরিহার করতে হবে। মেয়োনিজ জাতীয় খাবার বাসাতেও খাওয়া যাবে না। ইফতারি মূলত হতে হবে হালকা, তেল একেবারেই থাকবে না।’ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে রোজা রেখে ওজন কমানোর কিছু পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাই।
রোজা ও ওজন সংক্রান্ত পরামর্শ ১
সেহরি ও ইফতারে খুব বেশি ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। এর বদলে প্রচুর পরিমাণ সবজি ও ফল খান। পাশাপাশি প্রোটিনের চাহিদা পূরণে পাতলা মাংস খান। গরুর মাংস এড়িয়ে চলুন।
রোজা করে ওজন কমানো যায় না, তাই সঠিক খাদ্যগ্রহণের পরামর্শ ২
সেহরি কখনোই বাদ দেবেন না। এটা দিনের প্রথম খাবার। এই খাবার আপনাকে সারা দিন কর্মক্ষম রাখবে এবং শরীরের শক্তি জোগাবে। এই খাবার বাদ দিলে বিপাক হার কমে যায়। এতে মেদ পোড়ে কম।
পরামর্শ ৩
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। ফলের জুস, লাচ্ছি ইত্যাদি খান ইফতারের পর। রোজার সময়ে শরীরকে আর্দ্র রাখা খুব জরুরি। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
পরামর্শ ৪
উচ্চ পরিমাণ আঁশ ও প্রোটিনযুক্ত খাবার খান। বিশেষ করে ইফতারের সময় এই খাবারগুলো অবশ্যই খাবেন। কেননা এটাই দিনের শেষ খাবার। প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও আঁশ খেলে এগুলো বিপাক প্রক্রিয়াকে ভালো করতে সাহায্য করে। এতে ক্যালোরি পুড়তে সহজ হয়।
পরামর্শ ৫
রোজা রেখে শুয়ে-বসে থাকবেন না। সারা দিন কর্মক্ষম থাকার চেষ্টা করুন। রোজা রাখলে খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন। তাই হালকা ব্যায়াম করুন এই সময়। যেমন : হাঁটা, সিট-আপস, স্কুয়াটস ইত্যাদি করতে পারেন। রোজা রাখার পাশাপাশি ব্যায়াম করলে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
পরামর্শ ৬
ইফতার ও সেহরিতে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া যেন হয়েই যায়। এটা থেকে বিরত থাকা যেন কঠিন হয়ে পড়ে। তবে জানেনই তো মিষ্টিজাতীয় খাবার ওজন বাড়িয়ে দেয়। তাই চেষ্টা করুন এই জাতীয় খাবার এড়িয়ে যেতে। এর বদলে ফল, ফলের রস, খেজুর খান।
পরামর্শ ৭
ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ জরুরি। যখন সামনে অনেক মজাদার খাবার, লোভ সামলানো আসলেই দায়! তবে ফিট থাকতে মনকে নিয়ন্ত্রণ তো করতেই হবে। তাই না? ভারি খাবার এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া রোজায় ওজন কমাতে সাহায্য করবে। ইফতারের দুই ঘণ্টা পর ডিকার্বোনেটেড পানীয় বা গ্রিন টি খেতে পারেন। অতিরিক্ত পানি খেলে বারবার প্রস্রাব হওয়ার কারণে ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
গরমের দিনে দীর্ঘসময় রোজা রাখলে ডিহাইড্রেশনের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দুই থেকে তিন লিটার পানি পানে অভ্যস্ত হন। নিজেকে এ সময় অ্যাকটিভ থাকতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ দিন রোজা রেখে অ্যাকটিভ বা কর্মব্যস্ত না থাকলে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।
ইফতারের পর ২০-৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন কিংবা তারাবির নামাজ আদায় করলেও দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব হবে। বছরে অন্যান্য সময়ের মতো এ মাসেও সাধারণত ক্যালরি গ্রহণের চাহিদা একই থাকে। সুষম খাবার গ্রহণ করলে এ সময়েও ক্লান্তি অনুভব করবেন না।