শাওয়াল মাসে ওহুদের যুদ্ধ ও তার নেপথ্যকাহিনী

বদরের যুদ্ধে পরিপূর্ণভাবে পরাস্ত হওয়ার পরে কুরাইশদের মনে প্রতিহিংসার আগুন জ্বলছিল। তারা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আরেকটি যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। হিজরী তৃতীয় সন, শাওয়াল মাস। তারা মুসলিমদের উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মদীনার দিকে এগিয়ে আসে। মদিনার থেকে প্রায় চার মাইল দূরে ওহুদ পাহাড়। তারা এই পাহাড়ের নিচেই তাদের বাহিনীর ছাউনি স্থাপন করে। বদরের যুদ্ধের এক বছর পর এই যুদ্ধটি সংঘটিত হয়। এবং এই যুদ্ধটি ওহুদের যুদ্ধ নামে পরিচিত। ৩ হিজরির ৭ শাওয়াল (২৩ মার্চ ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দ হিজরি ৩ শনিবার) উহুদ পর্বের সংলগ্ন একটি স্থানে এই যুদ্ধটি সংঘটিত হয়।
মদিনার মুসলিম এবং মক্কার কুরাইশদের মধ্যে এই যুদ্ধটি হয়েছিল। মুসলিমদের পক্ষে যুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করেন হযরত মুহাম্মদ (সা:), আর কুরাইশদের পক্ষে এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন আবু সুফিয়ান। ইসলামের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া প্রধান যুদ্ধ গুলোর মধ্যে এটি দ্বিতীয়। এর ঠিক এক বছর আগেই বদরের যুদ্ধে মুসলিমদের হাতে কুরাইশরা পরাজিত হয়েছিল।
ওহুদের যুদ্ধ-এর নেপথ্যে সিদ্ধান্ত
নবীজি শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রচার করতে শুরু করলে তার নিজ কুরাইশ বংশীয় তোর কাছ থেকেই নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হন। এমনকি তারা নির্যাতনও শুরু করে। নির্যাতনের একপর্যায়ে মুসলিমরা মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করে। এরপর মদিনার মুসলিম এবং মক্কার কুরাইশদের মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যে যুদ্ধ টিকে আমরা বদরের যুদ্ধ নামে জানি। এই যুদ্ধে কুরাইশরা মুসলিমদের কাছে পরাজিত হয়। এই যুদ্ধে মক্কার কয়েকজন প্রধান গোত্র প্রধান নিহত হয়। পরাজয়ের গ্লানি এবং নেতৃস্থানীয়দের নিহত হওয়ার ঘটনায় তারা প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
তাই তারা আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এই যুদ্ধের প্রস্তুতিতে অগ্রগামী ছিলেন ইকরিমা ইবনে আবি জাহল, সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া, আবু সুফিয়ান ইবনে হারব ও আবদুল্লাহ ইবনে রাবিয়াহ। যুদ্ধের ব্যয় মেটানোর জন্য আবু সুফিয়ানের যে কাফেলা টি বদরের সময় রক্ষা পেয়েছিল তার সমস্ত সম্পদ বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এবং এই কাফেলায় অন্য যাদের সম্পদ ছিল তারাও এই সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মতি প্রদান করে। এই সম্পদের পরিমাণ ছিল এক হাজার উট এবং পঞ্চাশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা।
যুদ্ধ প্রস্তুতি
যুদ্ধ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয় এক বছরের মধ্যে। ৬২৫ সনের 11 মার্চ ৩০০০ সৈনিক নিয়ে মক্কার বাহিনী মদীনার দিকে যাত্রা শুরু করে। এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন আবু সুফিয়ান। এই বাহিনীর সাথে ৩০০০ টি উট ও ২০০ টি ঘোড়া ছিল। এ যুদ্ধে আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে উতবাসহ মক্কার আরো ১৫ জন নারী অংশগ্রহণ করেছিল। কুরাইশ নেতাদের একটি ধারণা ছিল যে তাদের সাথে নারীরা থাকলে তাদের সম্মান রক্ষা করার জন্য তারা বেশি পরিমাণে লড়াইয়ের উদ্দীপনা পাবে। কুরাইশরা মদিনাকে প্রথমে সরাসরি আক্রমণ না করে শহরের কাছাকাছি আকিকা উপত্যকা অতিক্রম করে কিছুটা ডানে ওহুদের নিকটবর্তী আয়নাইনে শিবির স্থাপন করে। এক পর্যায়ে হিন্দ বিনতে উতবা প্রস্তাব দেয় যে নবীজির মায়ের কবর যেন ধ্বংস করে দেয়া হয়। তবে নেতারা এই প্রস্তাবে রাজী হননি। তারা এর পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে এভাবেই রাজি হননি।
ওহুদের যুদ্ধ ও নবীজির স্বপ্ন
এদিকে মক্কা বাহিনীর যুদ্ধযাত্রার খবর নবীজির কাছে এসে পৌঁছায়। মদিনার বিভিন্ন স্থান যেন আকস্মিক আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়। এবং যুদ্ধের জন্য গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নিয়ে একটি সভা হয়। সেই সভাতে নবীজি নিজের দেখা একটি স্বপ্নের কথা জানান। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ আমি একটি ভালো জিনিস দেখেছি। আমি দেখি যে কতগুলি গাভী জবাই করা হচ্ছে। আরো দেখি যে আমার তলোয়ারের মাথায় কিছু ভঙ্গুরতা রয়েছে। আর এও দেখি যে, আমি আমার হাত একটি সুরক্ষিত বর্মের মধ্যে ঢুকিয়েছি।