সন্তানকে খুশি ও সুখী রাখতে কী করবেন

বাবা-মা সন্তানের জন্য সেরা আশীর্বাদ। কেন না সন্তানকে জন্মের পর থেকেই বাবা-মা তাদের বেড়ে ওঠতে সার্বিক দেখা-শুনা করে থাকেন। সন্তানদের উন্নত জীবনের জন্য এবং তাদেরকে সুস্থ, সুন্দর ও ভালো রাখতেই চলে বাবা-মার যত সংগ্রাম।
সন্তানের ভালো চায় না এমন মা-বাবা খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতই যে বাবা-মায়ের কাম্য। কিন্তু অনেক সময় সন্তানকে চাপে ফেলে অনেকে মা-বাবাই সন্তানের কাছে অপ্রিয় হতে থাকেন।
সন্তানের উচিত বাবা মায়ের জন্য দোয়া করা, আল্লাহর কাছে সেটাই অনেক শক্তিশালী আবেদন। যা মহান প্রভুই দুনিয়ার সন্তানদেরকে শিখিয়েছেন-
উচ্চারণ : ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।‘ (সুরা বনি-ইসরাইল : আয়াত ২৪)
অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন; যেমনিভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’
মনে রাখতে হবে বাবা-মা কখনো সন্তানের কাছে টাকা-পয়সা, বিলাসিতা কিংবা অসাধ্য-দুষ্প্রাপ্য কোনো কিছুই চায় না। প্রকৃত পক্ষে তারা চায় সন্তানের সঙ্গ, ভালোবাসা ও তত্ত্বাবধান। এ কারণেই হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন- বাবা-মা’র সন্তুষ্টিতেই রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর তাদের অসন্তুষ্টিতে রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।
সুতরাং দুনিয়ার সব মানুষের প্রতি আহ্বান, যাদের বাবা-মা জীবিত আছে, তাদের পতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করা। আর যাদের বাবা মা ইন্তেকাল করেছেন তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
সন্তানদের সুখের প্রশ্নে প্রথমেই আমাদের চিন্তায় আসে তাদের সুস্থতা, শিক্ষায় উন্নতি, দক্ষতা অর্জন অথবা যে কোনো সাফল্যের কথা। সন্তানকে খুশি ও সুখী রাখার ৮টি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. নিজে সুখী হোন, তাহলেই সন্তানকে সুখী দেখবেন
সুখী পিতা-মাতার সন্তানেরা স্বভাবতই সুখী হয়। যে পিতা-মাতা অসুখী জীবন যাপন করে, তাদের সন্তানও সুখী হতে পারে না। সুতরাং, নিজেকে সবসময় প্রফুল্ল ও আনন্দিত রাখুন। আপনার এ প্রফুল্লতা আপনার সন্তানের মনেও ছড়িয়ে পড়বে।
২. দায়িত্ব দিন ও তার নিজের গুরুত্ব বুঝান
সুখ অনেকাংশে নির্ভর করে নিজের গুরুত্ব উপলব্ধির উপর। কেউ যদি মনে করে, সে কোনো কাজের যোগ্য না, চারপাশের জন্য তার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই, তখন সে নিজের জীবনকে অর্থহীন মনে করে। তার মনে সুখ থাকতে পারে না। নিজেকে কোনো দায়িত্ব পালনের যোগ্য মনে করতে পারলে সে নিজের স্বার্থকতা অনুভব করতে পারবে।
আপনার সন্তানকে যদি আপনি ঘরের জিনিসপত্র, আসবাব সাজিয়ে রাখার মত পরিবারের ছোট ছোট কিছু দায়িত্ব দেন, তবে সে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। এতে সে আনন্দের সাথেই তার উপর দেওয়া দায়িত্ব পালন করবে।
৩. খেলার সময় দিন সন্তানকে
আজকাল শিশুদের পড়াশুনার জন্য এতটাই ব্যস্ত থাকতে হয় যে তারা নিজেদের মত কাটানোর সময় যথেষ্ট পায়না। ফলে তাদের জীবনে আনন্দ, প্রফুল্লতা অবশিষ্ট থাকে না।
আপনার সন্তানকে খেলার জন্য এবং তার নিজের মত সময় কাটানোর জন্য যথেষ্ট অবসর দিন। এতে সে আনন্দ ও প্রফুল্লতার সাথে বেড়ে উঠবে।
৪. পছন্দের সুযোগ দিন
সাধারণত ছোট সন্তানরা পছন্দ করার যথেষ্ট সুযোগ কম পায়। ক্রমাগতভাবে তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয় কোথায় সে যাবে, কী করবে এবং কী খাবে।
ছোট ছোট কিছু বিষয়ে তাকে পছন্দ করার সুযোগ দিন। উদাহরণস্বরূপ তার কাপড় কেনার সময় তাকে নিজের কাপড় পছন্দ করার সুযোগ দিন। কেউ নিজের পছন্দের কিছু পেলে তার সুখের কোনো তুলনা হয় না।
৫. সম্পর্ক তৈরির শিক্ষা দিন সন্তানকে
গবেষকরা জানিয়েছেন, যে ব্যক্তি অধিক লোকের সাথে তার সম্পর্ক তৈরি ও বজায় রাখে, সে অধিক সুখী হয়। আপনার সন্তানকে মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি শিক্ষা দিন।
তাদের অন্যের সাথে কথা বলতে, পরিচিত হতে উৎসাহিত করুন। পাশাপাশি তার সাধ্যানুযায়ী অন্যকে সাহায্য করার শিক্ষা দিন। এর মাধ্যমে আপনার সন্তান এক অপার্থিব আনন্দ লাভ করবে।
৬. নিঃশর্তভাবে ভালোবাসুন
আপনার সন্তানকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসুন এবং আপনার ভালোবাসাকে তার উপলব্ধির মধ্যে নিয়ে আসুন। আপনার ভালোবাসা তাকে আত্মবিশ্বাসী করবে। সন্তান যদি উপলব্ধি করতে পারে, তার সুখে-দুঃখে আপনি তার পাশে থাকবেন, তবে সে প্রশান্তি ও সুখ লাভ করবে।
৭. ঘরকে পরিপাটি রাখুন
আপনার ঘরকে পরিপাটি ও সুসজ্জিত রাখুন। অগোছালো ও অপরিচ্ছন্ন ঘরে কেউই সুখ ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারে না। সন্তানের সুখের জন্য ঘর পরিপাটি ও সুসজ্জিত রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
৮. অনুরাগ প্রদর্শন করুন
আপনার সন্তানকে জড়িয়ে ধরুন। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিন, গালে চুমু খান। সন্তান এতে সকল প্রকার চাপমুক্ত হয়ে মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারবে।
সন্তানের ভালোর জন্য বেশি শাসন করতে গিয়ে নিজেই সন্তানের কাছে অপছন্দনীয় হয়ে উঠেন। এমন তথ্য জানার পর কোনো অভিভাবকই স্বস্তিতে থাকেন না। মনে রাখবেন
১. সবার সামনে সন্তানের কোনো ব্যর্থতার বিষয়ে সমালোচনা করবেন না।
২. সন্তানের গায়ে হাত তুলবেন না। কোনো কিছু শুনতে না চাইলে সময় দিন ওকে। পরে বুঝিয়ে বলুন সে যা করছে তা তার জন্য কোনোভাবেই ভালো ফল বয়ে আনবে না।
৩. আপনার সন্তান যাদের সঙ্গে মিশছে তাদের সঙ্গেও কথা বলুন। তাদের কাছ থেকে এক ফাঁকে জেনে নিন তাদের পারিবারিক প্রেক্ষাপট।
৪. সন্তানের ভালো লাগা, মন্দ লাগার বিষয়টা খেয়াল রাখুন। ওর ভালো-মন্দের ব্যাপারে সচেতন হয়ে তারপরই কেবল হস্তক্ষেপ করুন।
৫. সন্তানের চাওয়াকে সম্মান দিন। বয়স বাড়লে তাদের পৃথিবীটা বড় হয়। তাদের জগতের সঙ্গে মানিয়ে নিন।