সন্তানকে হাসিখুশি পরিবেশে মানুষ করার উপকারিতা

যে শিশু হাসিখুশি পরিবারের হাসিখুশি পরিবেশে বেড়ে ওঠে সেই শিশুর মানসিক বৃদ্ধি অত্যন্ত উন্নত হয়। সে স্থির, বুদ্ধিমান ও মানসিক ভাবে পরিণত হয়। আমার পরিচিত এক ধার্মিক মুসলমান ভদ্রলোক বলেছিলেন তাঁর পিতাকে তিনি কখনও গম্ভীর মুখে থাকতে দেখেননি। এমনকি চরম বিপদের বা উদ্বেগের মুহূর্তেও তাঁর মুখের হাসিটি অমলিন ছিল। এই হাসি তাঁদের নানা সমস্যার সময় শক্তি যুগিয়েছে। তিনি নিজেও বাবার থেকে এই গুণ পেয়েছেন বলে নিজেকে ধন্য মনে করেন। অর্থাৎ শিশুকে আনন্দময় করে তুলতে পিতা মাতার মুখের হাসিটির থেকে বড় আর কিছুই নয়।
শাসনের পথ
অথচ অনেকসময় অনেক পিতা মাতা বা শিক্ষক এটা বোঝেন না। তাঁরা মনে করেন শাসন করলেই একমাত্র শিশু সঠিক পথে থাকে। শিশুর সঙ্গে সবসময় গম্ভীরভাবে দূরত্ব রেখে কথা বলতে হবে, তাহলেই শিশুকে মানুষ করা যাবে। এটা ভয়ানক ভাবে ভুল একটি চিন্তাধারা। শাসনের বদলে যদি একটু সংবেদনশীলতা ও আবেগ দিয়ে শিশুর সঙ্গে ব্যবহার করা হয় তাহলে অনেক ভাল ফল হয়। শিশু যদি দেখে তার বাবা মা বা শিক্ষকের মুখে সবসময় হাসি তাহলে সেও আস্তে আস্তে সহজ হয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারবে। সহজ হলে সে বিনা আয়াসেই সমস্ত নিয়ম মানবে, জেদি বা অবাধ্য হয়ে উঠবে না।
হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের কোনো মুসলিম ভাইকে খুশি করার জন্য এমনভাবে সাক্ষাৎ করে, যেমনটি সে নিজের জন্য পছন্দ করে। কেয়ামতের দিন (বিনিময়ে) আল্লাহ তায়ালা তাকে খুশি করবেন। (তাবারানি, হাদিস নং: ১১৭৮; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস নং : ১৩৭২১)
বস্তুত, হাসির মতো সাধারণ একটি আমলে আল্লাহ তায়ালা এতো বড় পুরস্কার দেবেন। ভাবতেই অবাক লাগে। হাসিমুখে কথা বলার দ্বারা মুমিন খুশি হয়। আর এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। ফলে বিনিময়ে তিনি বান্দাকে কেয়ামতের দিন আনন্দিত ও খুশি করবেন।
হাসির গুরুত্ব
মানুষের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে হাসি গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা রাখে। হাসিই মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ককে সহজ করে দেয়। আন্তরিক হাসির অধিকারী একজন মানুষ বিপুল কিছু জয় করে নিতে পারে।
রাসূল (সা.) সর্বদা হাসিমুখে থাকতেন। তাকে কখনোই কেউ অকারণে মুখ গোমড়া করে থাকতে দেখেননি।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমার সম্পদ দিয়ে কখনোই তুমি লোকদের সন্তুষ্ট করতে পারবেনা বরং তোমার প্রফুল্ল চেহারা ও উত্তম চরিত্রের মাধ্যমেই তুমি তাদের সন্তুষ্ট করতে পারবে।” (আল–হাকীম)।
হজরত জারির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি তখন থেকে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে তাঁর কাছে প্রবেশ করতে বাধা দেননি এবং যখনই তিনি আমার চেহারার দিকে তাকাতেন তখন তিনি মুচকি হাসতেন। (বুখারি, হাদিস : ৩০৩৫)
আল্লাহ আমাদের সকলের মুখেই প্রস্ফুটিত প্রসন্ন হাসি দেখতে চান। আর আল্লাহর উপহার সন্তানদের প্রতি এই হাসি বজায় থাকলে তা আমাদের সন্তানের সুস্থ বৃদ্ধির পরিচায়ক।
রসিকতা বোধ ও হাসি আনন্দের অভ্যাস শিশুর মধ্যে থেকে রাগ ও নিজেকে অপমান করার প্রবণতা দূর করে। উপরন্তু একটি নিরাপদ দুনিয়া সৃষ্টি হয় শিশুর জন্য।
পিতা মাতা যদি সর্বক্ষণ আনন্দময় থাকেন তাহলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি ঘটে তাঁদের সন্তানের জীবনে,
সুস্থ ও সুষ্ঠ বৃদ্ধি
জার্মান সাইকোলজিস্টরা বলেছেন যে একটি শিশু যদি ছোটবেলা থেকেই প্রাণ খুলে হাসতে পারে তবে তার সুস্থ ও সুষ্ঠ বৃদ্ধি হয়। পরিবারের মধ্যে তারা নিরাপদ বোধ করে ও মানসিক ভাবে সবল মানুষ হয়ে ওঠে।
শিক্ষায় উন্নতি
আনন্দের সঙ্গে যদি কোনও শিশু কিছু শেখে তাহলে অবশ্যই সেই শিক্ষা তাকে পরিপূর্ণতা দান করে।
বাবা মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি
আনন্দময় পরিবার সুস্থ পরিবার। এই পরিবারে প্রত্যেকটা মানুষ একে অপরের সঙ্গে এক ভালবাসার বন্ধনের যুক্ত থাকেন। হাসি ও আনন্দ সেই বন্ধন আরও জোরালো করে।
সুতরাং, প্রিয় পাঠক, নিজের সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসতে ভুলবেন না। দেখবেন সেও নিরুপম আনন্দ ফেরত দিচ্ছে আপনাকে।
আল্লাহ তো বলেইছেন, ‘আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন।‘ [কুর-আন ৩:১৫৯]