সন্তানহীন দম্পতিদের জন্য ৫ টি পরামর্শ

সম্প্রদায় হিসাবে একে অপরের বিরুদ্ধে অপ্রীতিকর কথাবার্তা আমাদের কোনো শক্তি নয়। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে, বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রাণবন্ত মিশ্রণের কারণে অনেক মানুষই অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু অপ্রীতিকর কথা বলতে পারে। দুঃখের বিষয়, অনেক দম্পতি যারা সন্তানহীন তারা প্রায়শই এরকম কিছু মন্তব্য সমাজের কাছ থেকে শুনে থাকেন। যার ফলস্বরূপ, অনেক বোন নিজেদের মাঝে ঘাটতি অনুভব করতে শুরু করেন এবং আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে তাদের মনে প্রশ্ন দেখা দেয়।
১.সন্তানহীন দম্পতিরা মনে রাখবেন এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “ধন-সম্পদ এবং সন্তানাদি পৃথিবীতে আনন্দের বিষয়”। তবে আরও বলেছেন, “জেনে রাখ, ধন-সম্পদ এবং সন্তানাদি তোমাদের জন্য পরীক্ষার বিষয়”। এই অর্থে, আল্লাহ যেমন কাউকে ধন-সম্পদ এবং কাউকে দরিদ্র্যতা দিয়ে পরীক্ষা করেন তেমনি তিনি কাউকে সন্তান দিয়ে এবং কাউকে সন্তান না দিয়েও পরীক্ষা করেন। যেমন ধন-সম্পদ না পাওয়া কোনোভাবেই আল্লাহর অসন্তুষ্টির লক্ষণ নয়, তেমনি সন্তান না থাকাও আল্লাহ আপনার প্রতি অসন্তুষ্ট এইদিকে ইঙ্গিত করে না। বরং আল্লাহ আমাদের সকলকে আমরা কী করতে পারি এবং কী করতে পারি না তা জেনে অনন্য উপায়ে পরীক্ষা করেন।
২. আপনার মাঝে কোনো ঘাটতি নেই
যে মহিলার সন্তান হয় না তার মাঝে কোনোভাবেই “ঘাটতি” বা “অসম্পূর্ণতা” নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসিয়া বিনতে মুজাহিম রাদিয়াল্লাহু আনহাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা মহিলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি ফেরআউনের স্ত্রী ছিলেন এবং তিনি কখনও সন্তানের জননী হননি, তবুও আল্লাহ তাঁকে সমস্ত ঈমানদার পুরুষ ও মহিলার জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। সুতরাং কারও সংবেদনশীল কথার কারণে যেন আপনি নিজেকে অন্য কারও চেয়ে নিম্নমানের মনে করেন না।
৩.সন্তানহীন হলে আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন
আল্লাহ যখন কুরআনে খিজির আ’লাইহিস সালাম এর ঘটনা উল্লেখ করেছেন, তখন তিনি এক দম্পতির তাদের ছোট বাচ্চা হারানোর কথা উল্লেখ করেছেন এবং এটি ছিল আল্লাহর অসীম প্রজ্ঞারই একটি অংশ। ভবিষ্যতে কি হবে তা আমরা জানি না এবং আল্লাহ কেন দান করেন এবং কেন ছিনিয়ে নেন তাও আমরা জানি না, তবে আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ এগুলো সবই আমাদের মঙ্গলের জন্যই করেন।
৪. দু’আ করতেই থাকুন
আল্লাহর কাছে দু’আ করা বন্ধ করবেন না কারণ কুরআনে এমন অনেক ধার্মিক লোকদের উদাহরণ রয়েছে যাদেরকে বৃদ্ধ বয়সে সন্তান দেওয়া হয়েছিল। আপনার দু’আ বিস্ময় ঘটাতে পারে। তবে আপনি যখন দু’আ করবেন, তখন আল্লাহকে বলুন যেন তিনি আপনাকে সন্তানাদি দান করেন, যাতে তারা যাকারিয়া আ’লাইহিস সালাম মত দ্বীনের সেবা করতে পারে।
৫. সন্তান দত্তক নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করুন
সর্বশেষ, পরিপূর্ণ ইসলামিক শিষ্টাচার মেনে একটি শিশুকে দত্তক নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করুন যাতে শিশুটির পরিচয় বজায় থাকে। পালিত মুসলিম পিতামাতার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না এবং আমাদের সন্তান থাকুক বা না থাকুক আমাদের সকলেরই উচিত কোনো শিশুকে দত্তক নেওয়া। এতিমকে দেখাশোনা করার ব্যাপারে হাদিসে অনন্য পুরস্কারের কথা এসেছে এবং কিয়ামতের দিন তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটবর্তী হওয়াকেও মনজুর করবে। আপনি যদি ২ বছর বয়সের আগে কোনো শিশুকে দত্তক নিয়ে আসেন এবং তাকে বুকের দুধ পান করান, তাহলে সেই সন্তানটি পিতা-মাতা এবং পরিবারের অন্য যেকোনো সদস্যের জন্য মাহরাম হয়ে যাবে। আপনি যদি জৈবিকভাবে সন্তান ধারণ করতে সক্ষম হন তবে হয়ত আপনি পালিত পিতা-মাতা হওয়ার কথা কখনও ভাববেন না। তবে এটি সেই অতিরিক্ত অনুপ্রেরণা হতে পারে যা আপনাকে অনাথের যত্ন নিতে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জান্নাত অর্জন করতে উৎসাহিত করতে পারে। আমরা আশা করি, আসন্ন বছরগুলিতে এই শূন্যতাটি অনেকটা পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ।
আমরা আশা করি, এই পোস্টটি সন্তানহীন দম্পতিদের জন্য কিছুটা হলেও সহায়ক হবে। তবে যদি কোনো আপত্তিকর বা সংবেদনশীল কিছু বলে থাকি তবে অনুগ্রহ করে বোঝার চেষ্টা করুন, এটি কখনও আমাদের উদ্দেশ্য নয়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে দুনিয়া ও আখিরাতের সার্বিক কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে হেফাযত করুন। আমীন।