সন্তান হল পিতামাতার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নি’আমত

এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি যে, একটি শিশু জন্মের পূর্বে পিতামাতাকে কোন বিষয়গুলির দিকে নজর রাখতে হয়।
শিশু যেন নেকসন্তানরূপে বেড়ে ওঠে সেজন্য পিতামাতাকে সন্তান জন্মের পূর্বেই অনেকগুলি বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হয়। নেকসন্তান জন্মদানের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবী ও সমস্ত মুমিনদেরকে সহবাসের পূর্বে আল্লাহর কাছে নিম্নলিখিত দু’আটি করার পরামর্শ দিয়েছেন-
“আল্লাহর নামে শুরু করলাম! হে আল্লাহ! আমাকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করুন এবং আমাদের আগত বংশধরদেরকেও শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করুন।”
একবার শিশু গর্ভধারণ করার পরে এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বড় নি’আমত। সুতরাং, সন্তান যেন ভালোভাবে ভুমিষ্ট হতে পারে সেজন্য পুরো গর্ভাবস্থায় সন্তানের মাকে অবশ্যই তাদের আগত মেহমানের জন্য যত্ন নিতে হবে। সঠিক খাবার খাওয়া, প্রয়োজনীয় পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিত্সা করাতে মাকে অবশ্যই যত্নশীল নিতে হবে। সন্তান জন্মের প্রস্তুতির মধ্যেও রয়েছে আল্লাহকে স্মরণ করা এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
“হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তোমার পক্ষ হতে একটি সুসন্তান দান করো। নিশ্চয় তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।” ( আল কুরআন-৩:৩৮)
“তিনি সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে একজন ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারে। অতঃপর সে যখন তার সঙ্গিনীর সাথে মিলিত হল, তখন সে হালকা গর্ভধারণ করল এবং তা নিয়ে চলাফেরা করতে লাগল। অতঃপর যখন সে ভারী হল, তখন উভয়ে তাদের রব আল্লাহকে ডাকল, “যদি আপনি আমাদেরকে নেকসন্তান দান করেন তবে অবশ্যই আমরা শোকরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হব” (আল কুরআন-৭:১৮৯)
“হে আমাদের রব! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন যারা আমাদের চোখকে শীতল করবে এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন।” (আল কুরআন-২৫:৭৪)
মুসলমানরা এটি বিশ্বাস করে যে, প্রতিটি শিশুই আল্লাহর আনুগত্যশীল হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রতিটি শিশুই মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করে; কিন্তু সে বড় হলে তার পিতামাতা তাকে অন্য ধর্মে দীক্ষিত করে তোলে।”
যখন কোনো সন্তান জন্ম নেয় তখন তা পিতামাতার জন্য অনেক সুখ ও আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে। সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী কাউকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, “হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একজন মানুষ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী…” (আল কুরআন-৪:১)
ইসলামের এমন এক সময়ে আগমন ঘটেছিল যখন আরবরা কন্যাসন্তান হত্যার চর্চা করত এবং প্রায়শই তাদের কন্যাসন্তানদেরকে জীবিত কবর দিত। এটি ছিল জাহেলী যুগের একটি ঘৃণ্য প্রথা। এ ঘৃণ্য প্রথার প্রতিবাদে আল্লাহ কুরআনে বলেন, “যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায়, আর সে অসহনীয় মনঃজ্বালায় পুড়তে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে মানুষের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে বেড়ায়। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে বাঁচিয়ে রাখবে নাকি তাকে মাটির নীচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখ, তাদের এই ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট।” (আল কুরআন ১৬:৫৮-৫৯)
আয়েশা(রাযিঃ) বলেন, “আমার কাছে একজন মহিলা এলেন। তার সঙ্গে তার দুই মেয়ে ছিল। আমার কাছে সে কিছু চেল। তখন আমার কাছে একটি খেজুর ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আমি তাকে সেটি দিয়ে দিলাম। সে তা গ্রহণ করল এবং তা দুই টুকরো করে তার দুই মেয়ের মাঝে ভাগ করে দিল। তা থেকে সে নিজে কিছুই খেল না। তারপর তারা চলে গেল। এসময় আমার কাছে নবীজী এলেন। আমি তার কাছে এই নারীটির কথা বললাম। তখন তিনি বললেন, “যাকে কন্যা দিয়ে কোনো কিছুর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয় এবং সে তাদের প্রতি যথাযথ আচরণ করে, তবে তা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষাকারী হবে” (মুসলিম)
সুতরাং, আল্লাহর উপহার ভেবে এবং বাস্তবিক ভালোবেসে যারা সন্তানদেরকে প্রতিপালন করবে, তাদের মাঝে ভেদাভেদ করবে না, আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেবেন। আর যারা তাদের লালন-পালনে অবহেলা করবে, আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেবেন।