স্ট্রেস: চিনে নিন আপনার এই কালান্তক শত্রুকে!

আজকের দিনে আমাদের জীবনের একটি অন্যতম বড় সমস্যা স্ট্রেস। আমরা অনেক সময়ই স্ট্রেসের মতো সমস্যাকে গুরুত্ব দিতে চাইনা। কিন্তু অপ্রিয় সত্যটা হলো যে এই সমস্যা শুধু মানষিক ভাবে নয় শারীরিক দিক থেকেও মানুষকে জর্জরিত করে তোলে। এখানে এমনই দশটা সমস্যার বলবো যা আপনার মধ্যে থাকলে আপনি সম্ভবত স্ট্রেসের শিকার এবং আপনাকে জীবনযাপনের ধারা পরিবর্তন করতে হবে। কারণ এটি শরীরে বিভিন্ন রকম রোগের সঞ্চার ঘটিয়ে জীবনকে দুঃসহ করে তোলে, তাই একে গোড়া থেকে বিনাস করা একান্ত প্রয়োজন।
মাথা যন্ত্রণা ও মাথা ভার হয়ে থাকা স্ট্রেস থেকে
স্ট্রেস প্রকাশের অন্যতম লক্ষণ মাথা যন্ত্রণা ও মাথা ভার হয়ে থাকা। আমাদের রোজকার জীবনের অতিরিক্ত কাজের চাপ স্ট্রেসের মূল কারণ। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা কিংবা কোনো বিষয়ে বেশি ভাবার ফলেও এটি হতে পারে।
গায়ে-হাতে অসহ্য যন্ত্রণা স্ট্রেস থেকেই
প্রতিদিনের ছুটন্ত জীবনে স্ট্রেস স্বাভাবিক ঘটনা। স্ট্রেসের লক্ষণদের মধ্যে অন্যতম হলো গায়ে-হাতে এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে প্রচন্ড যন্ত্রনা। যেকোনো সুস্থ মানুষের জীবনেও এটি ভীষণ রকম ব্যাঘাত ঘটায়। আবার যাদের ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরল আছে তাদের জন্য এটি আরও ভয়াবহ।
দূর্বলতা বোধ হওয়া
আমরা যদি প্রায় প্রত্যেকদিনই দূর্বল বোধ করি তার কারণ হতে পারে স্ট্রেস। স্ট্রেস আমাদের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। একটি গবেষণা থেকে জানা যায় ২৩৫ জন যুবক-যুবতীদের ছয় মাস কম স্ট্রেস ও বেশি স্ট্রেস দেওয়া হলে, যাদের কম স্ট্রেস দেওয়া হয়েছে তারা বেশি সবল থাকে।
অনিয়মিত ঘুম স্ট্রেসের কারণ
আমাদের প্রত্যেকদিনের কাজের চাপের ফলে ঘুম অনিয়মিত হয়ে যায়। অনেকর আবার অনিয়মিত ঘুমের বদঅভ্যাস আছে, যার কারণে স্ট্রেস হতেই পারে। অনিয়মিত ঘুমের ফলে শারীরিক জৈবক্রিয়াপ্রক্রিয়ার সময়ঘড়ি বিঘ্নিত হলে স্ট্রেস ছাড়াও আসে অন্যান্য জটিল সমস্যা। আবার স্ট্রেস থেকেও অনিয়মিত ঘুম হয়।
যৌন সমস্যা
যৌন সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ স্ট্রেস। অনিয়মিত জীবনধারণের ফলে তৈরি হওয়া বিরক্তি যৌন আকাঙ্খাকে তলানীতে নিয়ে যায়। এর পিছনেও প্রধান কারণ স্ট্রেস। ইনড্রোফিন ইনহিবিট, LHR+ হরমোনের ক্ষরণের ফলে LH এর মাত্রা কমে যায়। স্ট্রেস হরমোন যৌন হরমোন কে বাধা দেয়, ফলে উত্তেজনার অভাব ও মিলনে অনাসক্তি দেখা যায়।
মাদক ও তামাকে আসক্তি
মাদক ও তামাক আসক্তির থেকে বোঝা যায় আপনি স্ট্রেসে আক্রান্ত। এই সময় ধূমপান ও মদ্যপানের পরিমাণ অস্বাভাবিক রকম বৃদ্ধি পায়। অ্যালকোহল আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে কর্টিসল বের করে যা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে বন্ধ করে দিতে শুরু করে। মানুষ ভাবে অ্যালকোহল আমাদের স্ট্রেস কমায় কিন্তু আসলে ঘটে উল্টোটা।
মানসিক অবসাদ স্ট্রেসের লক্ষণ
আমাদের এনার্জির পরিমাণ কমিয়ে দেয় এই স্ট্রেস যার ফলে দেখা যায় মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেসন। অতিরিক্ত কাজের চাপ, লাগামছাড়া দুশ্চিন্তা সহজেই আমাদের ঠেলে দেয় সাদাকালো অবসাদের দুনিয়ায়। রোজকার জীবনে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম না নেওয়া, মনখুলে না হাসা, সমাজ থেকে নিজে গুটিয়ে রাখার ফলে আমরা অবসাদে ভুগতে থাকি।
স্নায়ুর সমস্যা
স্ট্রেসের কারণে আমরা প্রচুর সংখ্যক মানুষ স্নায়ুর সমস্যায় আক্রান্ত। স্ট্রেস থেকে দেখা যায় অনিয়মিত ঘুম, হজমের সমস্যা- ফলে স্নায়ুর সমস্যা অবশ্যম্ভাবী। স্নায়ু বা নার্ভের সমস্যা আমাদের সাধারণ কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে আমাদের দুর্বল করে তোলে। এই স্ট্রেস বেশি হলে স্নায়ুরোগ ভয়ংকর আকার ধারণ করে।
হজমের সমস্যা
হজমের সমস্যা হওয়ার মূলেও অনেকক্ষেত্রে স্ট্রেসকে দায়ী করেন চিকিৎসকরা। হজম ঘটিত সমস্যা যেমন ডায়েরিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য স্ট্রেসের ফলে হওয়া কিছু রোগের উদাহরণ। সঠিক সময় এবং পরিমিত খাবার না খাওয়ার ফলে এগুলি হতে পারে যা বর্তমান দুনিয়ায় খুবই স্বাভাবিক। অতিরিক্ত ফাস্টফুড থেকে স্ট্রেসের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।
দুশ্চিন্তা ও স্ট্রেস
দুশ্চিন্তা যেকোনো সুস্থ মানুষকে ঠেলে দিতে পারে অবসাদের দিকে। এছাড়াও বিভিন্ন শারীরিক রোগেও দুশ্চিন্তা অনুঘটকের কাজ করে। এই দুশ্চিন্তা থেকেই আসে স্ট্রেস যা মনে বহু নেতিবাচক চিন্তা নিয়ে আসে। দুশ্চিন্তা থেকে আত্মহত্যার প্রবণতাও তৈরি হয়।