স্বল্পখরচে চিকিৎসা: পথ দেখাচ্ছেন নারী জৈবপ্রযুক্তিবিদ

মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসে বিশ্বকে নিজের প্রতিভার দ্বারা তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এরকম মহিলা প্রায় হাতে গোনা। এদের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হলেন ডঃ হায়াত সিন্ধি। স্বল্পখরচে চিকিৎসা ব্যবস্থায় তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
স্বল্পখরচে চিকিৎসার জননীর নিজের জীবনঃ
১৯৬৭ সালের ৬ই নভেম্বর সৌদি আরবের মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন হায়াত বিন সুলায়মান বিন হাসান সিন্ধি। ছোটো থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী হায়াতকে উচ্চশিক্ষার জন্য বেগ পেতে হয়। পরিবারের সহায়তায় ১৯৯১ সালে তিনি রওনা দেন ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। ইংরেজি ভাষা এবং সেখানকার আদবকায়দা সম্বন্ধে চৌকস হতে লেগে যায় একটা বছর। তারপরেই হায়াত যোগ দেন লন্ডনের কিংস কলেজে।
ধর্মপ্রাণা এই মহিলা বিদেশের মাটিতে পা রাখলেও ইসলামের সঙ্গে তাঁর বন্ধনে কোনো আঁচড় পরেনি। কলেজে পড়াকালীন হিজাব নিয়ে বিতর্ক এবং সমস্যা সৃষ্টি হলে হায়াত সাফ জানিয়ে দেন কারও ধর্মীয় বিশ্বাস বা রীতিনীতির সাথে তার বিজ্ঞানে অবদানের কোনো সম্পর্ক নেই।
তা প্রমাণও করে দেন তিনি। ফার্মাকোলজিতে ব্যাচেলর করার সময় তাঁর অ্যালার্জি বিষয়ক গবেষণা ডঃ সিন্ধিকে এনে দেয় প্রিনসেস অ্যানস্ খেতাব। কিংস করেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করার পর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউনহ্যাম কলেজে বায়োটেকনোলজি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন যা তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রী এনে দেয়।
২০০১ সালে পাওয়া এই ডক্টরেট ডঃ সিন্ধির নামে বেশ কয়েকটি রেকর্ড এনে দেয়। তাঁর আগে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো নারী কেমব্রিজে বায়োটেকনলজি নিয়ে পড়াশোনা অথবা গবেষণা করেনি। অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে তিনিই হলেন বায়োটেকনলজি নিয়ে গবেষণা করা প্রথম মহিলা।
স্বল্পখরচে চিকিৎসার সূচনাঃ
ডঃ সিন্ধি বর্তমানে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপিকা। এছাড়া তিনি জেদ্দা, বস্টন, কেমব্রিজ এবং ম্যাসাচুসেটসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সক্রিয় ভাবে যুক্ত। তাঁর হার্ভাডে করা বিভিন্ন গবেষণার জন্য মার্কিন সরকারের উদ্যোগে করা একটি ডকুমেন্টারিতে তিনি স্থান পান আরও চারজন বৈজ্ঞানিকের সাথে।
তাঁর বিস্তৃত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রের বাইরে ব্যবসায়িক বিষয়েও কাজে আসে। ডঃ সিন্ধি তিনটি কম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন চিকিৎসাকে সহজলভ্য করে তুলতে। তাঁর লক্ষ্য হলো সহজলভ্য এবং কম খরচে চিকিৎসাকে সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা। একাজে এখনও পর্যন্ত তিনি যথেষ্ট সফল হয়েছেন।
অ্যারাবিয়ান বিজনেস পত্রিকা ডঃ সিন্ধিকে বিশ্বের ১৯তম প্রভাবশালী আরবি ব্যক্তিত্ব বলে ঘোষণা করে এবং মেয়েদের মধ্যে তাঁর জায়গা হয় নবম স্থানে। এরপরে বিবিসির সেরা ১০০ জন নারীর তালিকাতেও তিনি স্থান পান।
২০১২ সালে ইউনেসকো তাঁর নারীশিক্ষার উপর উদ্যোগ দেখে তাঁকে শুভেচ্ছা দূত (Goodwill Ambassador) হিসেবে নিযুক্ত করে। তাঁর স্বল্পখরচে চিকিৎসা বিশ্বে বন্দিত হয়েছে।
ডঃ সিন্ধির সমগ্র কর্মজীবন তিনি মানবজাতির কল্যানের উদ্দেশ্যে সমর্পণ করেছেন এবং একথা বলাই যায় আধুনিক সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম সারিতে থাকা নারীদের মধ্যে তাঁর স্থান হবে।